×

জাতীয়

ঢাকা সিটি ভোটে নিরব কারচুপির তদন্ত দাবি

Icon

nakib

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:০৯ পিএম

ঢাকা সিটি ভোটে নিরব কারচুপির তদন্ত দাবি

সিটি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সুজনের সংবাদ সম্মেলন

সদ্যসমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য এবং প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করে এর মূল কারণ হিসেবে অকর্মন্য নির্বাচনকমিশনকে ভেঙে দিয়ে ইসি পূণগঠনের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি এবং সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক নিরব কারচুপির তদন্তের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন।  সোমবার (২ ৪ফেব্রুয়ারী) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিেিত আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রুবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ। সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটিতে ভোটার হার কম হওয়ার বিষয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুজন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনের পরে এ দুৃটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছিল ইসির জন্য অগ্নি পরীক্ষা। তেমনি ইভিএমেরও পরীক্ষা ছিল। তবে তাতে ইসি ব্যর্থ হয়েছে। ভোটারহীন নির্বাচন এখন নতুন স্বাভাবিকতায় পরিনত হয়েছে। এ কমিশন ও সরকোরের অধীনে কোন সুষ্টু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তিনি নির্বাচনে অনিয়মের তদন্ত দাবি করেন।

সুজন সম্পাদক বলেন, একটি প্রচার আছে যে, নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরও যদি সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল। তবে দিনে দিনে রাজনীতি ব্যবসায়ীকরণ ও ব্যবসায়ী রাজনীতিকরণ হচ্ছে। বর্তমানে আমরা কতৃত্ববাদী সরকারের অধীনে চলে যাচ্ছি, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, এটি স্পষ্ট যে, সামগ্রিকভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন। তবে অতীতের তুলনায় নিয়ন্ত্রণের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনগুলো যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুবই অল্প ভোট পড়েছে। উত্তর সিটিতে গড় ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে পড়েছে গড়ে ২৯ দশমিক সাত শতাংশ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, এত কম ভোটার উপস্থিতির কারণ ভোট সুষ্ঠু হবে না এ ধরনের পূর্ব ধারণা।

স্বল্প ভোটার উপস্থিতির আরও বেশকিছু কারণের মধ্যে ছিল- নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থা না থাকা। ইভিএম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার ও ইভিএমের ওপর আস্থা না থাকা। দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হুমকির কারণে শঙ্কিত হয়ে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ হওয়া। পাড়া-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্র পাহারা এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জটলা ও মহড়া। আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে কিছু কিছু ভোটারের ভোট না দিয়েই ফিরে যাওয়া। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়া। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে ‘ভোটকেন্দ্র না গেলেও তাদের প্রার্থী জয়ী হবেই’ এমন ধারণা বদ্ধমূল থাকা। প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ও ‘তাদের প্রার্থী জিততে পারবে না’ এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া। তাছাড়া যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা এবং একসঙ্গে দুইদিন ছুটি থাকাও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ। ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০: বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন তুলে ধরে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হলো, তা জানতে নির্বাচনের পর সুজনের ফেসবুক পেজে আমরা একটি অনলাইন ভোটের (পোল) ব্যবস্থা করি। আমাদের প্রশ্ন ছিল, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে আপনি মনে করেন কি না?’ এতে চার হাজার ৩০০ জন মানুষ অংশ নেয়। যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের ৯৪ শতাংশ বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App