×

সারাদেশ

কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ

Icon

nakib

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। তাদের প্রশ্ন- বিভিন্ন অভিযোগের কারণে অধিকাংশ বর্তমান কাউন্সিলর দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পরও কীভাবে নতুন করে বিতর্কিতরা মনোনয়ন পেলেন? এ পরিস্থিতিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্পর্কে নতুন করে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। শেষ মুহূর্তে কাউন্সিলরদের মনোনয়ন পরিবর্তনও হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, চসিক নির্বাচনে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পেতে ফরম সংগ্রহ করেন মোট ৪০৬ জন। ফরম সংগ্রহকারীদের মধ্যে বর্তমান, সাবেক কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা রয়েছেন। অনেক যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকারের পর গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত তালিকা বিশ্লেষণে দলীয় সমর্থন পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাংগঠনিক পরিচয়ে কাউন্সিলরের মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাও কাউন্সিলর মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া কোনো কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।

কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের প্রার্থী হাজী নুরুল হকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের কোনো পদে না থেকেও শুধু মিথ্যার ওপর ভর করে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। এর আগে ১৯৯৪ সালে তিনি বিএনপির মনোনয়নে একই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় মনোনয়ন ফরমে সাংগঠনিক পদবিতে তিনি নিজেকে ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা’ উল্লেখ করেন। অথচ মহানগর আওয়ামী লীগে নুরুল হক নামে একজন উপদেষ্টা থাকলেও হাজী নুরুল হক নামে কোনো উপদেষ্টা নেই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘হাজী নুরুল হক নামে যে ব্যক্তি নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়েছেন তিনি আমাদের কোনো উপদেষ্টা নন।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুর বলেন, দলের কোনো পর্যায়ে সাংগঠনিক কোনো পদ নেই হাজী নুরুল হকের। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চোরাকারবারি ও হত্যা মামলা রয়েছে। ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর পদে মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমদ চৌধুরী বলেন, ভুয়া রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েছেন মিন্টু। তিনি নিজেকে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা উল্লেখ করে মনোনয়ন চেয়েছেন। অথচ এ যাবৎকালে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের কোনো উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়নি।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফুর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি কোনোভাবেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ সফি। স্থানীয়ভাবে ‘সফি রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বাস-টেম্পো-মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, জমি দখল, সরকারি জায়গায় কবরস্থান তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফু বলেন, আমার বাবা অতি সহজ-সরল একজন মানুষ ছিলেন। কোনো রাজনীতি করতেন না। হলফ করে বলছি, শুধু আমার বাবা নয়, আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতেই কোনো রাজাকার নেই।

দলীয় সমর্থন পাওয়া ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোবারক আলীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, সন্ত্রাস, আধিপত্য বিস্তারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ির কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মো. জোবায়েরের বিরুদ্ধে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মনোনয়ন পাওয়া ওয়াসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমি-দস্যুতার অভিযোগ রয়েছে। ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আবদুস সবুর লিটন। তার বিরুদ্ধে মাদক ও স্বর্ণ চোরাকারবারের অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পাওয়া ১৪নং লালখানবাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল কখনো নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পদে ছিলেন না। অথচ দলীয় মনোনয়ন ফরমে তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য উল্লেখ করেছেন। গতকাল রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ বলেন, কাউন্সিলর পদের প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল আওয়ামী লীগে কোনো অঙ্গ-সংগঠনের পদেও নেই। তবে আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মৌখিকভাবে আমাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পদ দিয়েছেন।

দলীয় কোনো পদ পদবি না থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের প্রার্থী শৈবাল দাশ সুমনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছে জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পরিচয় দিলেও তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো পদ পদবিতে নেই বলে অভিযোগ করেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তবে শৈবাল দাশ সুমন বলেন, আমার চৌদ্দগোষ্ঠী আওয়ামী লীগার। জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে আমার প্রাথমিক সদস্য পদ আছে। ছাত্রজীবনেও আমি ছাত্রলীগ করেছি।

এদিকে ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন বতর্মান কাউন্সিলর সৈয়দা কাশপিয়া নাহরিন। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সমর্থন পেলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের নেতা বা কর্মী ছিলেন না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দক্ষিণ পাহাড়তলী ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, কাশপিয়া নাহরিন কখনো আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা (৯, ১০ ও ১৩নং) ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে তছলিমা বেগম নুরজাহানকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন না। জামালখান ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাংগঠনিক পরিচয় ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বন্দর এলাকার ২৮, ২৯ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন পাওয়া জিন্নাত আরা বেগমের সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App