×

সারাদেশ

যাজকদের মারধর করে চার্চের কক্ষ দখল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:৩৮ পিএম

যাজকদের মারধর করে চার্চের কক্ষ দখল

চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চ

বরিশালের উজিরপুরের গুঠিয়ার বৈরকাঠি গ্রামে ৪৫ বছরের পুরনো খ্রীস্টানদের তীর্থ স্থান চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চ দখল নিয়ে ধর্মযাযক ও স্থানীয় একটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের খবরে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। দ্বন্দ্ব নিরসনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে জেলা প্রশাসক সমঝোতা বৈঠকে করলেও ধর্ম যাজকদের দাবি ওই চিঠি জাল। কারণ ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেখানে কোন কমিটি নেই। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ জালিয়াতি করেছে মিল্টনগংরা। এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি চিঠির আলোকে কমিটি ঘোষণার পর ত্রাসের ভূমিকায় অবতীর্ন হয় মিল্টনসহ তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। তারা সেখানকার ধর্ম যাজকদের মারধর করে একাধিক কক্ষ দখলসহ সকল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। চার্চের ভারপ্রাপ্ত যাজক আনন্দ বিশ্বাস বলেন, পথভ্রষ্ট হয়ে বের হয়ে যাওয়া মিল্টনগংদের সাথে ধর্ম প্রচারকদের দ্বন্দ্বের সমাধানে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চের ভিতর সমঝোতা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে ৫ সদস্যের কমিটির ঘোষণা করেন। ওই কমিটির ৫জনই পথভ্রষ্ট পরিবারের সদস্যদের। এরপর আমরা আইন মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করে সেখান থেকে যে চিঠি ইস্যু হয়েছে তার কপি বের করি। মন্ত্রনালয়ের সহকারি সচিব মো. তফিকুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে কোন কমিটি করা হয়নি। পূর্বের নির্দেশে যেখানে কমিটির নাম দেয়া হয়েছে এ নির্দেশ কপিতে সেখানে উল্লেখ রয়েছে সংযুক্তি : বর্ণনামোতাবেক মোট ১৬ (ষোল) ফর্দ। সংযুক্তিরস্থলে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কমিটির সদস্যদের নাম লেখা হয়। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। অপরদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি বিরোধ মীমাংসার জন্য চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চে মধ্যে অনুষ্ঠিত সমঝোতা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, ইউএনও, ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। কমিটি ঘোষণা দিয়ে জেলা প্রশাসক চলে যাওয়ার পর ওই রাত থেকে শুরু হয় মিল্টনগংদের একছত্র রাজত্ব। মিল্টন ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে চার্চের ভিতর রামরাজত্ব কায়েম করে। তারা জোরপূর্বক ধর্ম প্রচারকদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি কক্ষের চাবি নিয়ে তা দখলে নেয়। তাতেও খ্যান্ত হননি। চার্চের সকল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বাধা দিলে ধর্ম প্রচারকদের মারধর করা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উজিরপুর থানার ওসিকে অবহিত করা হলেও সেখান থেকে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা ৯৯৯ নম্বরে কল করে সহায়তা চান। ধর্ম যাজকরা আরো জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুরু হওয়া ত্রাসের মধ্যেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। চার্চ থেকে যে কোন মুহূর্তে বের করে দেয়ার জন্য মিল্টন ও তার বাহিনী অবস্থান করায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের চিঠি জালিয়াতির বিষয়ে মিল্টন সমোদ্দার বলেন, কোন জালিয়াতি করিনি। ওই দু’টি কাগজ একই খামের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছে। তিনি সেভাবে সমাধান দিয়েছেন। তারপরও আরো কিছু জানতে হলে আপনারা জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, আসলে মন্ত্রণালয় থেকে কি নির্দেশ দিলো সেটা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে দুই গ্রুপের মধ্যে মনের মিলন। আর সেটা না হলে তাদের মধ্যে কোন সমঝোতা করা সম্ভব হবে না। তারপরও এ বিষয়টি নিয়ে আমি আবার বসবো। উল্ল্যেখ্য মিল্টন ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই চার্চের অধীন ছিল। কিন্তু তারা চার্চের মতাদর্শ না মেনে সেখানকার প্রায় তিন একর জমি দখল করে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান করার পায়তারা করছে। আর ধর্ম যাজকরা কোনভাবেই সেটি করতে দিতে না চাওয়ায় এ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App