×

মুক্তচিন্তা

মামলার অগ্রগতি দেখতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৫০ পিএম

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। সর্বনাশা আগুন ৭১ তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। চকবাজার ট্র্যাজেডি আমাদের অপরিকল্পিত ব্যবস্থার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ঢাকার রাসায়নিকের কারখানা আর গুদামগুলো সরিয়ে নেয়া। ২০১০ সালের ১৫ জুন ওই কমিটির প্রতিবেদনে যে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছিল কিছু কিছু বাস্তবায়ন হলেও আসল কাজটিই করা সম্ভব হয়নি গত ১০ বছরে। পুরান ঢাকাবাসীর এখন একটা প্রশ্ন, আর কত মানুষ মারা গেলে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরবে? চকবাজার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শম্বুকগতিতে এগিয়ে চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো মেলেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই বিভীষিকাময় মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের নয়টি তারিখ পার হয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে প্রতিবেদনের জন্য। এছাড়া মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দিও নেয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির এমন অবস্থা দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টা মোড়ের কাছে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর চারতলা ওয়াহেদ ম্যানসনসহ ৫টি ভবনে আগুন ধরে যায়। ওই ভবন এবং আশপাশের দোকানে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম আগুনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে ৬৭ জনের পোড়া লাশ মর্গে পাঠান উদ্ধারকর্মীরা। পরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ জনে। এ ঘটনায় পরের দিন ‘অবহেলার কারণে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ফলে মৃত্যুসহ ভয়াবহ ক্ষতিসাধনের’ অপরাধে মামলা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য ঘটনার এক বছর সময় অতিবাহিত হলেও নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও এখনো মিলেনি। এতে অপরাধীরা আরো উৎসাহ পাবে এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে আসছে, পুরান ঢাকায় নতুন করে অবৈধ কেমিক্যাল কারখানা গজিয়ে উঠছে। তথ্যানুযায়ী, পুরান ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আবাসিক বাড়িতে। এসব কারখানায় সালফার, পটাশ, ফসফরাস, সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, ইথানল, মিথাইল, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, তারপিনসহ নানা প্রকার গান পাউডার বিক্রি হচ্ছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। চাল-ডাল, তেল-সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার মতো। নিমতলীর ঘটনার পর দাবি ওঠে সেসব কারখানা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার। শেষ পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি। দেশে এত বড় দুর্ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কি জবাবদিহির আওতায় আসবেন? চকবাজারের ঘটনায় আবার একটা ওয়েকআপ কল পেলাম আমরা। একে যদি আমরা আমলে না নিই, তাতে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আর এর স্থায়ী সমাধান একটাই কেমিক্যালের কারখানা স্থানান্তর করা। কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লীর দ্রুত কাজ শেষ করে রাসায়নিক পদার্থের সব কারখানা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। চকবাজারের ঘটনায় মামলার অগ্রগতিও আমরা দেখতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App