×

মুক্তচিন্তা

বাংলা ও বাঙালির জয় হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৩৫ পিএম

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আমি পুরান ঢাকার কে এল জুবলি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তখন আমাদের ক্লাস শিক্ষক ছিলেন কামরুজ্জামান স্যার। তিনি পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছিলেন। হয়েছিলেন কে এল জুবলি স্কুলের প্রিন্সিপাল। পরবর্তীতে কে এল জুবলি স্কুল-কলেজে রূপান্তরিত হলে তিনি কলেজেরও প্রিন্সিপাল হন।কামরুজ্জামান স্যার ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় স্যারের সঙ্গে আমার সখ্য ছিল ভালো। স্যারের নেতৃত্বে আমরা একাধিকবার মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেও আমরা মিছিল সহকারের ভাষা আন্দোলনের জনসভায় যোগ দিয়েছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা : সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিকে প্রাচীর তৈরি করে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং উপাচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস বর্ষণ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়। কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে দৌড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে বলে। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়। কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। ছাত্ররা সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণের কিছু ছাত্রকে ছাত্রাবাসের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আবুল বরকত সে সময় আহত হন এবং রাত ৮টায় প্রয়াত হন। এখানে উল্লেখ্য ওই দিন বর্তমান যেখানে শহীদ মিনার সেখানের দেয়াল টপকাতে গিয়ে আমার পরনের শার্ট ও প্যান্ট ছিঁড়ে যায়। হাত-পা ছুলে সামান্য আহতও হই। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ভাষায় মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শহর-নগর-গ্রাম-বন্দর সর্বত্র একুশে উদযাপিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমও এখন বাংলা (উচ্চ শিক্ষার কতিপয় ক্ষেত্র বাদে)। সরকারি কর্মকাণ্ডের ভাষাও বাংলা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলা ভাষা এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত মর্যাদা পায়নি। প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। উচ্চ আদালতেও পুরোপুরি বাংলার ব্যবহার হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার পর্যায় পর্যন্ত শুদ্ধরূপে বাংলা ভাষা লেখা ও বলার ক্ষেত্রে যে দুরবস্থা বিরাজ করছে, তা কেবল লজ্জাজনক নয়, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধও বটে। এবারের একুশের প্রতিজ্ঞা হোক, আসুন আমরা সেই আলোকোজ্জ্বল পথে মাতৃভাষা বাংলাকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। বাংলা ভাষার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাই। পরিশেষে বলছি, বাংলা ও বাঙালির জয় হোক। জয় হোক সব জাতির মাতৃভাষার।

মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App