×

সাহিত্য

বিকৃত শব্দ, বিকৃত আনন্দেরই প্রকাশ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৭ পিএম

বিকৃত শব্দ, বিকৃত আনন্দেরই প্রকাশ!

শহীদ মিনারের আঁকা হচ্ছে আলপনা। ছবি: ভোরের কাগজ।

বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি। রফিক, সালাম, বরকতদের রক্তের বিনিময়ে সেদিন আমরা পেয়েছিলাম প্রাণের মা-কে ডাকার অধিকার। মুক্তি পেয়েছিল অসংখ্য তালাবদ্ধ না বলার অঙ্গীকার। হারিয়েছিল হানাদারদের অকথ্য নির্যাতনের প্রতিবিম্ব। শির তুলে দাঁড়িয়েছিল সেই স্বপ্নের জয়গান- মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা...।

আজও আমরা সেই শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। শহীদ মিনারে ফুল দেই। প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে দলে দলে যাই। কিন্তু ভাষাকে কি অন্তরে ধারন করি? নাকি ভাষাকে ধারন করার নামে গলা টিপে হত্যা করি! এইসব প্রশ্ন এখন উঠে আসে। দাঁড়িয়ে যায় দেয়াল হয়ে। হয়তো কখনও এসে আকুতি করে বলে, এবার আমায় মুক্তি দাও।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই ভাষা এবং ভাষা শহীদদের মর্যাদা কতটুকু! তারা ভাষাকে হৃদয়ে ধারন করছে কিনা সে বিষয়ে মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন উঠে। আমরা কতটা মর্যাদার আসনে রাখতে পেরেছি এই বাংলা ভাষাকে? বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে উঠে আসা চিত্র দেখে আমরা শঙ্কিত হই।

আজকের তরুণরা এমন সব বিকৃত শব্দ ব্যবহার করছে যার কোনো অর্থ নেই। কোনো অভিধানেই খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন- হুদাই, পিনিকে আছি, প্যারা, মাইরালা, বিন্দাস, ঝাক্কাস, পাংখা- এসব শব্দ তরুণদের মুখে মুখে ফেরে। বিকৃত ভাষা বা শব্দ কোথা থেকে আসে? আমরা আনন্দ পাই, মজা পাই এসব শব্দ ব্যবহার করে। তবে আমি বলবো- শব্দকে বিকৃত করে যে আনন্দ পাই তা বিকৃত আনন্দ। আমাদের বিরূপ মানসিকতারই পরিচয় প্রকাশ পায় তাতে।

প্রতি ফেব্রুয়ারিতে আমরা শহীদদের যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করে শহীদ মিনারে ফুল দেই। কিন্তু সকাল বেলায় মাতৃভাষার বদলে ‍উচ্চশব্দে হিন্দি কিংবা ইংলিশ গান বাজানোর দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায়। অথচ কেউ জানতে চায় না- কবে, কখন, কীভাবে- এই ভাষা আমাদের জন্য কতটা ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া।

অনেকেই জানেন না তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী যে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাধি দিয়েছিলেন তার ইতিহাস। অনেকেই জানেন না গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনা বিল নাকচ হয়ে যাবার পরে সেই দাবিতে ১১ মার্চের ধর্মঘটে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো শিক্ষকেরা সামনে থেকে রাস্তা দেখিয়েছিলেন। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আলী আহাদ এবং রণেশ দাশগুপ্তসহ অসংখ্য ছাত্রনেতা।

তাইতো ভাষা দিবসে তরুণদের মাতৃভাষার প্রতি আবেগ ভালোবাসা আর যত্নবান হওয়ার আহ্বান জোরালো হয়। আবেগ প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ জানান, তরুণরা একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি। তারা চাইলে দেশের মূল শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বাংলাভাষা একটি স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু আমরা বাঙালিরা সেটিকে উপলব্ধি করতে পারি না কিংবা উপলব্ধি করেও কাজে প্রমাণ করতে পারি না। তাই তরুণদের উচিত ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসা।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাতৃভাষাকে ধারন করবে। ভাষাকে মধুর্যতার রঙে রাঙিয়ে হৃদয়ে ধারন করবে। এটাই ছিল বায়ান্নর আহ্বান। সেদিনও তরুণরা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় অগ্রণী ছিল। এখনও ভাষাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে তরুণদের অগ্রনায়ক হতে হবে। তবেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মূল্যায়ন হবে বলে মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App