×

অর্থনীতি

সিন্ডিকেটের খপ্পরে শ্রমবাজার

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫২ এএম

সিন্ডিকেটের খপ্পরে শ্রমবাজার

প্রবাসী শ্রমিক

বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঘিরে বিভিন্ন সিন্ডিকেট বরাবরই সক্রিয়। এই সিন্ডিকেটের কারণে একদিকে যেমন বিদেশ যেতে আগ্রহী শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হচ্ছে; অন্যদিকে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার চালু হলেই শত কোটি টাকার ফায়দা লুটতে একটি সিন্ডিকেট এখন থেকেই সক্রিয় হয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্ট সূত্র বলছে, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সি এ সিন্ডিকেটের সদস্য। এমন ১০ এজেন্সির অপতৎপরতার কারণেই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তারাই এখন খোলস পাল্টে রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে দক্ষ জনবল তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়ায় নতুন করে শ্রমবাজার খুলতে সরকারি উদ্যোগ খুব একটা দৃশ্যমান নয়। অথচ উচ্চপর্যায়ে তদবির করে দক্ষ জনবল তৈরিতে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ‘একাডেমি সাউজানা’ থেকে তাদের অধিনস্ত বাংলাদেশের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করে ইতোমধ্যে একটি চিঠি ইস্যু করিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। যা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের বাংলাদেশ সফরের সময় চ‚ড়ান্ত করার চেষ্টা ছিল। তবে হঠাৎ করেই মন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ায় এ সিন্ডিকেটের পরিকল্পনা আপাতত ভেস্তে গেছে বলে জানা গেছে। গুজব উঠেছে, মালয়েশিয়া মন্ত্রীর সফর বাতিলের পেছনে এ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতাই দায়ী। একদিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে সিন্ডিকেট, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি তৈরির নামে আরেক সিন্ডিকেট; সবমিলিয়ে সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে মধ্যপাচ্যের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত কাটছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, রবিবার মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে মন্ত্রীর সফর বাতিলের খবর তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। হঠাৎ জরুরি কাজে তিনি আপাতত সফর স্থগিত করেছেন। ইমরান আহমদ জানান, কুলাসেগারানের সফর স্থগিত হলেও ২৪ ফেব্রুয়ারি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান হলে পরবর্তীতে এম কুলাসেগারান বাংলাদেশে আসতে পারেন। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের ৬ দিনের সরকারি সফরে আজ বুধবার ঢাকায় আসার কথা ছিল। তার সফরসূচিতে ছিল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক। এম কুলাসেগারানের এই সফরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালকমো. শামছুল আলম এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেছেন, বিষয়টি পলিসি মেকিং পর্যায়ের। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করে। জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ‘একাডেমি সাউজান’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশে তাদের অধিনস্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে। এ জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। যাতে ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার লি., সিনপ্লেক্স ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, সাদিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বসুন্ধরা ট্রেনিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, এ আর এম ট্রেনিং এন্ড এসেসমেন্ট সেন্টার, প্রোসার্চ ট্রেনিং সেন্টার, জিলানী গালফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট এন্ড সার্ভিস, ইস্টার্ন রিসোর্সেস মানেজমেন্ট সার্ভিস লি., সরকার ট্রেনিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, বিএনএস টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও আফিয়া টেকনিক্যাল এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের নাম উল্লেখ রয়েছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কথা ছিল। তাদের প্রশিক্ষিত জনবল মালয়েশিয়ার জন্য যোগ্য মনোনীত হবেন এমন চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে। এক মাস প্রশিক্ষণের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। অথচ সরকারিভাবে দেশব্যাপী বিনা পয়সায় দক্ষ জনবল তৈরির কাজ চলছে। সূত্র মতে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণির জনশক্তি নিলেও শুধু বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। বেসরকারি পর্যায়ে নির্দিষ্ট ১০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার জনপ্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়ে এ কাজ করে আসছে। অথচ বাইরে যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই পরীক্ষার ব্যয় মাত্র ৩৫০ টাকা। আবার জনপ্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে নেয়া হলেও শতকরা ৩৫ জন আনফিট হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে বাতিল হচ্ছে তাদের ভিসা। আনফিট হওয়ায় বিদেশ যাত্রা অনিশ্চিত হলেও তারা প্রত্যেকে খোয়াচ্ছেন ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যদিও অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তারা ফিট হচ্ছে! স্বাস্থ্য পরীক্ষার এই সিন্ডিকেট হচ্ছে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল অনুমোদিত ‘মেডিকেল সেন্টারস এসোসিয়েশন’ (গামকা)। মধ্যপ্রাচ্যে গমনেচ্ছুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ১০টি মেডিকেল সেন্টারের সমন্বয়কারী সংস্থা হচ্ছে গামকা। যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তবে জনভোগান্তি ও খরচ কমে আসবে। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকলেও ২০১৭ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে দুই দেশের মন্ত্রিসভায় পাস করা চুক্তিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেকসি নেট তাদের পছন্দসই ১০টি রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করে। ওই চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, ওই কোম্পানির সফটওয়্যার ছাড়া কোনো শ্রমিক পাঠাতে পারবে না। অথচ মালয়েশিয়ায় আশিয়ানভুক্ত অন্য ১৩টি দেশ জনশক্তি রপ্তানি করলেও সেখানে কারো মধ্যস্থতার দরকার হয় না। ভারত, পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এনালগ পদ্ধতিতে জনবল রপ্তানি করলেও শুধু সিস্টেমের নামে বাংলাদেশকে একটি সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এর আগে জিটুজির আওতায় গামকার ১০টি প্রতিষ্ঠান সাড়ে ৪ লাখ লোকের মেডিকেল পরীক্ষা করলেও ‘আনফিট’ দুই লাখ লোকের পরীক্ষার টাকা কারা হজম করেছে- এর সদুত্তর নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App