×

মুক্তচিন্তা

শ্রমবাজার সিন্ডিকেটমুক্ত হবে না?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৪৯ পিএম

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানি। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখনো জনশক্তি রপ্তানির প্রধান টার্গেট। নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। একমাত্র সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার গতি এখন পর্যন্ত ঠিক থাকলেও অন্যান্য দেশে কর্মী পাঠানোর হার দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললেও শতকোটি টাকার ফায়দা লুটতে একটি সিন্ডিকেট এখন থেকেই সক্রিয় হয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্ট সূত্র বলছে, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সি এ সিন্ডিকেটের সদস্য। এমন ১০ এজেন্সির অপতৎপরতার কারণেই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। চক্রটি নতুন নামে আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত যেন কাটছে না। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারগুলোর একটি মালয়েশিয়া। ২০০৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকলেও ২০১৭ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে দুই দেশের মন্ত্রিসভায় পাস করা চুক্তিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেকসি নেট তাদের পছন্দসই ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করে। ওই চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, ওই কোম্পানির সফটওয়্যার ছাড়া কোনো শ্রমিক পাঠাতে পারবে না। অথচ মালয়েশিয়ায় আশিয়ানভুক্ত অন্য ১৩টি দেশ জনশক্তি রপ্তানি করলেও সেখানে কারো মধ্যস্থতার দরকার হয় না। ভারত, পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এনালগ পদ্ধতিতে জনবল রপ্তানি করলেও শুধু সিস্টেমের নামে বাংলাদেশকে একটি সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়ায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ৭ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ হাজার ১০৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৬৩৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭০ কোটি ৬ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অন্য দেশগুলো হচ্ছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়া শ্রমিক গমন পদ্ধতি অন্যান্য দেশের মতো সহজ হলে রেমিট্যান্স আরো বাড়ত এতে সন্দেহ নেই। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অধিক কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ ভোগ করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ তরুণ। এদের শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হলো রেমিট্যান্স। জনশক্তি রপ্তানি এ ক্ষেত্রে বড় ভ‚মিকা পালন করছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সহনশীল ব্যয়ের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করাটাই এখন বড় কর্তব্য। সিন্ডিকেট সমস্যাটি এখানে প্রকট। কোনোভাবেই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে যাতে ব্যয় বেড়ে না যায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাতে কেউ নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App