×

মুক্তচিন্তা

ভালো থাকুক মায়ের ভাষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩০ পিএম

ভাষার শৃঙ্খলার প্রতি সর্বোচ্চ সচেতন থেকে প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে নিখাদ ভালোবাসায় ‘বাংলা ভাষা’র আন্তরিক ও স্বতঃস্ফ‚র্ত ব্যবহারের শপথে পালিত হোক ‘মুজিববর্ষ’-এর ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
মায়ের ভাষা, আপামর বাঙালির প্রাণের ভাষা ‘বাংলা’র জন্য অমূল্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেক ভাষাশহীদ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে সংগ্রাম আজো ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে তার নজির পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্র বা জাতি তাদের ভাষার জন্য করেনি বা করতে হয়নি। তারই পুরস্কারস্বরূপ দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পেয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। গোড়াপত্তন করেছে আমাদের জাতীয় অর্জনের সমৃদ্ধ ইতিহাসের। আর সব মূল্যবান গৌরবের ভিত গড়ে দেয়া বাংলা মায়ের সেই সব অদম্য ছেলেদের আমরা মহাসমারোহে স্মরণ করি প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে। ভাষার মাসে আয়োজিত হয় একুশে বইমেলা। ২১ তারিখে খালি পায়ে প্রভাতফেরি আর মুখে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গান গেয়ে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিই মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ দেশের সব শহীদ মিনার। আয়োজিত হয় আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠান। জোর দেয়া হয় প্রমিত বাংলায় কথা বলতে ও শুদ্ধতার সঙ্গে লিখতে। পত্রিকার পাতা ভরে যায় বিভিন্ন ছোট-বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের শ্রদ্ধাবাণী সংবলিত নজরকাড়া বিজ্ঞাপনে। ব্যস এটুকুই! এরপর আবারো সেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো। বিদেশি ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি, হিন্দিতে কথা বলাকে ধরে নিয়েছি আধুনিকতা আর সভ্যতার অন্যতম শর্ত। বাংলা বলি ইচ্ছেমতো উচ্চারণে! সঙ্গে ইংরেজি কিংবা হিন্দি মিশিয়ে! হেয় করি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে! লেখায় গাঁথি ভুল বানানের মালা! সঙ্গে দাবি করি, ভাব বা অর্থ বুঝাতে পারাই আসল! অথচ আমাদের এমন লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডে চরমভাবে বারবার ধর্ষিত হচ্ছে শরীরের উষ্ণ তাজা লাল টকটকে রক্ত আর অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। যে শহীদরা কেবল মায়ের ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি, মিছিলে যাওয়ার আগে কিছু পাওয়ার হিসাব করেননি সেই পরম নিঃস্বার্থদের উত্তরাধিকারী হয়েও আজ শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা বলতে ও লিখতে আমরা পুরস্কারপ্রাপ্তির আশায় কিংবা লোভে নাম লেখাই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য মিশ্রিত ভাষা প্রতিযোগিতায়! মায়ের মিষ্টি ভাষার প্রতি যে প্রেম বা টান চিরন্তন অনিবার্য হয়ে আমাদের রক্তে মিশে থাকার কথা সেটা আজ আমাদের মননের নিকটতম প্রদেশেও জায়গা ধরে রাখতে পারেনি! বাংলা ভাষার জন্য জাতির সূর্য সন্তান ভাষাশহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ, মাইকেল মধূসুদন দত্তের অমূল্য ধনরত্নে সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষার প্রতি মিথ্যা মোহ এবং তার করুণ পরিণতির ইতিহাস, বাংলা ভাষার প্রতি সারা বিশ্বের অনন্য মূল্যায়ন ইত্যাদি জানার পরেও কেবল বৈষয়িক পণ্য কিংবা আকর্ষণীয় পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক প্রচারণামূলক প্রতিযোগিতা জীবন দিয়ে পাওয়া ভাষা এবং মহান ভাষাশহীদদের প্রতি কতটা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান জানানোর চেতনা জাগাবে তা সত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ। চেতনায় ‘বাংলা’কে লালন করে জাতির প্রাণ ও মন থেকে উৎসারিত সর্বোচ্চ মায়া ও গভীরতম ভালোবাসা যে ত্যাগ আর অর্জনের প্রাপ্য অধিকার সেই ভাষা আর সংগ্রাম আজ পণ্যের বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের হাতিয়ার! এভাবে চলতে থাকলে জাতি হিসেবে আমরা সভ্যতার কাঠগড়ায় মহান ’৫২-এর ফেব্রুয়ারি একুশের প্রকৃত চেতনার হন্তারক হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হব। কারণ ২১ ফেব্রুয়ারি কেবল মায়ের ভাষাকে করায়ত্ত করেনি এটি মহান ’৭১-এর দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরও মূল প্রেরণার উৎস। মায়ের ভাষার সম্ভ্রম রক্ষা ও ভাষাশহীদদের অমূল্য ত্যাগের প্রাপ্য যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় বিকৃত উচ্চারণ বন্ধ, ভাষার শৃঙ্খলার প্রতি সর্বোচ্চ সচেতন থেকে প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে নিখাদ ভালোবাসায় ‘বাংলা ভাষা’র আন্তরিক ও স্বতঃস্ফ‚র্ত ব্যবহারের শপথে পালিত হোক ‘মুজিববর্ষ’-এর ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। হ সহকারী শিক্ষক, ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্দরবান। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App