×

মুক্তচিন্তা

বই হোক আত্মার খোরাক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৪ পিএম

বই হোক আত্মার খোরাক

পৃথিবীর অন্যতম বহুভাষাবিদ জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ভাষায় তাকে একজন পণ্ডিত মানা হয়। তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। আর এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তিনি বইয়ের ভেতর নিমগ্ন থাকতে পছন্দ করতেন। শহীদুল্লাহ একদিন পাঠাগারের এক কোনায় বসে বই পড়ছেন, পড়ছেন তো পড়ছেনই, বইয়ের মাঝে ডুবে একাকার হয়ে আছেন। কিন্তু লাইব্রেরিয়ান পাঠাগার বন্ধ করার সময় তাকে লক্ষ না করে বন্ধ করে চলে যান। শহীদুল্লাহ বিরামহীন পড়ছেন। কোন সময় পাঠাগার বন্ধ হলো তা টের পেলেন না। যত বড় বই-ই হোক, তিনি একবারে শেষ না করে কোনোভাবেই উঠতেন না। যা হোক, পরদিন রীতিমতো পাঠাগার খোলা হলো। খোলা মাত্র লাইব্রেরিয়ানের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল তার ওপর। লাইব্রেরিয়ান তো তাকে দেখে রীতিমতো হতবাক। শহীদুল্লাহকে তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনি পুরো রাত পাঠাগারে বন্দি ছিলেন? তখন শহীদুল্লাহর ধ্যান ভেঙে গেল। কিছু না বুঝে তিনি মুখ তুলে বললেন, ‘কই সে রকম কিছু না তো। আমি তো কেবল বই পড়ছিলাম!’ একেই বলে বইয়ের কী নেশা। দিনের শেষে পুরো রাত পেরিয়ে গেল ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ টেরই পেলেন না! ইতিহাসে এমন বইপাগল মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমাদের বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একজন বইপ্রেমী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পাঠস্পৃহা ছিল তাঁর অপরিমেয়। তিনি ছিলেন সর্বগ্রাসী পাঠক। যখনই তিনি অবসর পেতেন তখনই তিনি বইয়ের বিচিত্র জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন। যে কোনো আদর্শ মানবের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁদের চরিত্র অসংখ্য অনুপম গুণের সমাবেশে গঠিত হয়েছিল। পরোপকারী মনোবৃত্তি, পরদুঃখে কাতরতা, ক্ষমাশীলতা, সততা, সাহস, ধৈর্য , নিষ্ঠা, অনমনীয়তা, নির্ভীকতা, উদারতা, দূরদর্শিতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ প্রভৃতি মহৎ গুণ তাঁদের চরিত্রকে করেছে মহান ও মহিমান্বিত। কীভাবে তাঁদের চরিত্রে এতসব গুণের সমন্বয় ঘটেছিল? যদি এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয় তাহলে দেখা যাবে এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে তাঁদের দুর্নিবার বইপ্রেম। আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যদি বই না পড়ি তাহলে আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি আপনাআপনিই ধ্বংস হয়ে যাবে, কোনো যুদ্ধবিগ্রহের দরকার হবে না। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বই। ঘুণেধরা এই সমাজের যাবতীয় অধঃপতন ঠেকাতে বইয়ের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। একটি সুস্থ, সুন্দর, আলোকিত নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আর তাই বই হোক আমাদের আত্মার খোরাক।

 শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App