×

সাহিত্য

বইমেলার পশ্চিমে উৎসব, পূর্বে হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:২২ পিএম

বইমেলার পশ্চিমে উৎসব, পূর্বে হাহাকার

বইমেলায় শিশুরা। ছবি: ফাইল

অতীতের রেকর্ড ভেঙে অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরিসর বাড়িয়ে চোখ ধাঁধানো করে তোলা হয়েছে। নান্দনিকতায় টইটম্বুর করে সাজানোও হয়েছে গোটা চত্বর। অংশগ্রহণকারী প্রকাশক আর স্টলের সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবার। তবে চারদিকের ঝলমল এই জৌলুসের মধ্যেই কারো কারো কাছে মেলা হয়ে উঠেছে অভিশাপ।

বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একেবারে পূর্বাংশের অর্ধশত স্টলে চলছে হাহাকার অবস্থা। পাঠক, বইপ্রেমী বা ক্রেতাদের দেখা না পেয়ে অন্ধকার দেখছেন স্টল মালিকরা। মেলার গেট খোলা থেকে শুরু করে বন্ধ হওয়া অবধি বেচাবিক্রি শূন্যের কোঠায় হওয়ায় চলছে হাহাকার। স্টলের খরচ উঠানো তো দূরের কথা নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়ছেন স্টল মালিকরা। এতে হতাশায় দিন কাটছে বিক্রয়কর্মীসহ কর্মচারীদের।

মেলার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদেরও। কারণ তাদেরও দেখা নেই পূর্বাংশের স্টলগুলোতে। এমনটিই অভিমান প্রকাশ করলেন স্টলমালিকরা। বইমেলার এই চিত্র তাই চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে সবার। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মেলার ১৮তম দিনে এমন চিত্র দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একেবারে পূর্বাংশে। স্টল মালিক ও প্রকাশকদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। আয়োজক কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ পূর্বাংশে অর্ধশতাধিক স্টল বরাদ্দ দিলেও এর আশেপাশে কোনো প্রবেশপথই রাখেনি। বেশকিছু খাবার দোকান বরাদ্দ করা হলেও অবহেলা প্রকট। রয়েছে একটি মসজিদও। তবে নামাজ, প্রাকৃতিক কর্মসম্পাদন, চা-সিগারেটের প্রয়োজন ছাড়া কেউই এদিকটায় পা বাড়াতে চান না। আর মিডিয়ার লোকজন তো উৎসবমুখর অংশেই ব্যস্ত সময় কাটান। এদিকের হাহাকার চোখেই পড়ে না।

জানতে চাইলে দ্যু প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হাসান তারেক ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোরের কাগজকে বলেন, বিক্রি একেবারেই হচ্ছে না। মেলা এতো বিস্তৃত হয়েছে যে খাবারের প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসতে চান না। প্যাভিলিয়ন পর্যন্ত এসে ফিরে যান।

একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভিন্নচোখ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী দিয়া বললেন, এদিকটায় বেচাকেনার কোনো পরিবেশই নেই। নামাজ, বিড়ি, সিগারেট, চা পান ছাড়া কেউ আসেনও না। মনে হচ্ছে পরিত্যক্ত এলাকায় পড়ে গেছি আমরা। অথচ দ্যাখেন মাঝে আর পশ্চিমে উৎসব চলছে। আর আমাদের এদিকে হাহাকার!

[caption id="attachment_200817" align="alignnone" width="700"] বইমেলায় স্টলে বই দেখছেন শিশু ও অভিভাবক। ফাইল ছবি।[/caption]

গণপ্রকাশনীর পারভেজ ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, মনে হচ্ছে ১৯৫৬ সালের দুর্ভিক্ষ চলছে। কাশবন প্রকাশনীর আফসানাও বললেন, বেচাকেনা নেই বললেই চলে। সত্যিকার অর্থেই হাহাকার চলছে আমাদের। খুব মন খারাপ এবং হতাশ লাগছে।

নিখিল প্রকাশনীর অমূল্য চন্দ্র দাশ বললেন, ক্রেতারা শুধু চা খেতে আসেন। বই কিনতে কেউ আসেন না। তাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি। প্রকৃতি প্রকাশনীর স্বপন কুমার দাশ বলেন, ক্যান্টিন আর বাথরুমের লগে স্টল হলে যা হয় তাই হচ্ছে। খুব খারাপ অবস্থা।

সব্যসাচী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মেরী বলেন, এদিকেও যে কিছু স্টল রয়েছে, পাঠকরা মনে হয় জানেনই না। বাঙালি প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী সুলতানা বলেন, আমরা একেবারে বেকোয়ার্ড সাইডে পড়েছি। কোনো লোকই আসছেন না। স্টল ভাড়াও মনে হচ্ছে উঠবে না। শিল্পতরু প্রকাশনীর আহসান আরিফ খোকন বলেন, এই গলিতে লোকজনের আনাগোনাই নেই। যে কারণে বিরক্ত হয়ে প্রতিদিন ৮টার আগেই স্টল বন্ধ করে দিয়ে চলে যাই। আমাদের এখানে হাহাকার আর পশ্চিম পাশে উৎসবের আলোয় ঝলমল করছে। একই রকম বক্তব্য দিয়ে শব্দরূপ প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বললেন, আয়োজকরা মনে হয় বিষয়টি মাথায় রাখেনি। শুধু মেলার পরিসর বাড়িয়ে সবার প্রশংসাই চেয়েছেন।

তবে দ্যু প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হাসান তারেকের মতামত হচ্ছে, মেলার আকর্ষণ অক্ষুন্ন রাখতে হলে এদিক পর্যন্ত প্যাভিলিয়ন নিয়ে আসতে হবে। তাতে বিক্রির সুযোগ থাকবে। এছাড়া এদিকটায় প্রবেশপথ করা হলে ঢুঁ মারার এক্সেস তৈরি হতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App