×

সাহিত্য

একুশের প্রহরে পাড়ায় পাড়ায় আল্পনা আঁকতাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:১৯ পিএম

একুশের প্রহরে পাড়ায় পাড়ায় আল্পনা আঁকতাম

সৈয়দ হাসান ইমাম/ ফাইল ছবি।

আমাদের তারুন্যের যে মেলা, সেই মেলাটার মধ্যে আবেগটা আরো বেশী ছিলো। সে সময় আমরা শহীদ মিনারে যখন আসতাম একুশের সারা প্রহর রাস্তাগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতাম। একুশের প্রহরে পাড়ায় পাড়ায় আল্পনা আঁকতাম। অন্যরকম একটা আবেগ নিয়ে আমরা বাড়ি থেকে একেবারে খালি পায়েই বেরুতাম। এখন তো শহীদ মিনারের ওই চত্বরে এসে মানুষ জুতো খোলে। জুতোটা ব্যাগে রেখে শহীদ মিনারে ওঠে। পারলে জুতো পায়েই উঠে যান। সেটা তখন ছিলো না। আমরা বাড়ি থেকেই খালি পায়ে বেরুতাম। সেসময় একুশে ফেব্রুয়ারীর দিকে যথেষ্ট শীত পড়তো। এখনকার মতো গরম পড়তো না। ওই সময়টার অনুরণন এখন আর পাই না। লেখকদের আড্ডা এখনও হয়। তবে আগে বেশী ঘণিষ্ট ছিলো।

বই মেলা প্রসঙ্গে ভোরের কাগজের এক প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন। ছেলেবেলার মেলা কেমন ছিল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ছেলেবেলা নয়, যৌবনে মেলা পেয়েছি। অবশ্য আমি তো ইংরেজ আমলের মানুষ। স্বাধীনতার আগেও আমরা মেলা পেয়েছি। প্রথমে চিত্তবাবু মেলা করেছেন। তারপরে বাংলা একাডেমী শুরু করলো। সেসব মেলা আমরা উদযাপন করতাম আনন্দ নিয়ে। সেই সময় তো প্রতি পাড়া থেকে প্রচুর বুলেটিন, কবিতার বই বেরুতো। একশো দেড়শো কবিতার বই এক টাকা করে আমরা কিনতাম। বই বোঝাই হয়ে যেতো। এসব বইয়ের বোঝা বয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না! এখন তো সেই চলটা উঠে গেছে। পাড়ায় পাড়ায় যেসব সংকলন বেরুতো সেসব আর নেই। ওইসব সংকলনের প্রতিযোগীতা হতো। বিভিন্ন সাংস্কৃৃতিক সংসদের ওই প্রকাশনাগুলো শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা হিসেবে পুরস্কৃতও হতো। এছাড়া আরো অন্যান্য প্রকাশনাও ছিল। আমাদের বিখ্যাত কবিরা ওইসব পাড়ার সংকলনগুলোতে লিখতেন। কিন্তু এখন সেসব আর নেই।

এই যে সংকলন প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেছে, এটা খারাপ দিক, না ভালো দিক কীনা এ প্রশ্নের জবাবে এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, এটা খারাপ দিকও বলবো না, ভালো দিকও বলবো না। এটা একটা ঘটনা। হলে ভালো হতো। এখন তো প্রকাশনা অনেক সহজ হয়ে গেছে। কম্পিউটার কম্পোজ সহজ হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডে আমার এক বন্ধু আছেন, যাকে দেখেছি, বাড়িতে বসেই কম্পোজ থেকে শুরু করে সব করেন। কেবল বাইন্ডিংটা বাইরে করেন। প্রযুক্তি সব কিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। মন্দ না।

মেলা তো এখন সম্প্রসারিত হয়ে গেছে, এই সম্প্রসারনের কারণে মেলার স্পন্দনটা কি কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে? এর জবাবে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, সম্প্রসারিত মেলাটাই তো ভালো লাগছে। এটা আমাদের অনেক দিনের দাবী ছিল। অনেক প্রকাশক মেলায় জায়গা পেতেন না। এখন সবাই জায়গা পেয়েছেন। এতে করে বিক্রিও বাড়বে। অনেক বই প্রকাশকরা প্রকাশ করলেও পাঠকের কাছে পৌঁছাতো না। এখন তারা ঘুরে ফিরে দেখে কিনতে পারবেন। সম্প্রসারনের কারনে মেলার স্পন্দন একটুও কমেনি। বরং নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা বেড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App