×

মুক্তচিন্তা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, পাঠকের গ্রন্থমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৪২ পিএম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, পাঠকের গ্রন্থমেলা

ফাইল ছবি

চলছে গ্রন্থমেলা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা। চার দেয়ালের বাঁধন থেকে কয়েক বছর আগেই গ্রন্থমেলা ডানা মেললেও এবার যেন আরো একটু উড়াল। থোকা থোকা হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিজেকে প্রশস্ত করে উপস্থাপন। আগা-গোড়ায় বিস্তার ঘটেছে। অনেককে সেই কবে থেকে বলতে শুনছি গ্রন্থমেলা চলে না, গ্রন্থমেলা ম্যারম্যারে, গ্রন্থমেলা ঠাসাঠাসি, গ্রন্থমেলা অনুন্নত, গ্রন্থমেলা গেল-গেল! গ্রন্থমেলা কি গিয়েছে? গ্রন্থমেলা কি তার স্বরূপ হারিয়েছে? কার কি মত, উত্তর তা জানি না। স্বল্প বিচরণ, অভিজ্ঞতা, দৃষ্টি, অবলোকনে মনে হয়নি অমর একুশে গ্রন্থমেলা নির্জীব হয়েছে। বরং সজীব হচ্ছে তড়তড় করে। গ্রন্থমেলার পাঠক বাড়ছে, না কমছে? পাঠকের বৃদ্ধি ও হ্রাস নিয়েও প্রতি বছর শোক-তাপের অভাব হয় না। শুধু বইমেলা চলা সময়ে নয়, সারা বছরই এই আলোচনাটি বইয়ের দোকানে, লেখক আড্ডায়, প্রকাশনের মেলায়, পাঠক আন্দোলনে গমগম করতে দেখা যায়। আসুন বুকে হাত দিয়ে, দেখুন নিজের সৃষ্টিকর্মের দিকে, চোখ রাখুন যা আপনি রচনা করলেন (গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ ইত্যাদি) তা আসলে কতটুকু পাঠযোগ্য! আপনি আপনার সৃষ্টিটির দিকে কি একবার মন দিয়ে চোখ বুলিয়েছেন? একজন যোগ্য লেখককে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায় না! একজন পরিশ্রমী পড়–য়া লেখককে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা করতে শোনা যায় না! যার লেখায় শান আছে, যার লেখায় চমক আছে, যার লেখায় নতুনত্ব আছে তাকে কারো পিছু পিছু সময় নষ্ট করতে হয় না! তবে আপনাকে কেন? যার বই বিক্রি হচ্ছে না, চলছে না তাকেই কান্না করতে দেখা যায় যে, বই চলছে না, বই পড়ছে না কেউ... ইত্যাদি। আবার নিজের বই চলা মানেও পাঠক বাড়ছে এটাও নয়। সত্যিকার পাঠক বাড়ছে না কমছে এই হিসাব মিলাতে হলে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন নানান আঙ্গিক থেকে। বইয়ের পাঠক কখনোই বাণিজ্যমেলার পণ্যের ভোক্তার মতো ছিল না। কখনো হবেও না। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বই পড়তেন, পড়েন, পড়বেন। এই পাঠককে ঠেলেঠুলে সরানো যাবে না। আবার নতুন পাঠক টেনেটুনে আনাও যাবে না। তবে নেতিবাচক সমালোচকের একটা গোষ্ঠী যে সরব তাও মাথায় রাখতে হবে। পাঠকের মনে ভয় ধরিয়ে যারা পাঠক নষ্ট করতে অতিউৎসাহী তাদের হিসাবটাও কড়ে গুনে রাখতে হবে, হিংসার আগুনে যারা ফুঁ দেন তাদের মুখ ভুলে গেলে বিরাট ক্ষতি গ্রন্থমেলারই। গ্রন্থমেলায় বইয়ের মান কি আসলে খুশি করতে পারছে পাঠককে! পারলে কতটুকু পারে? আদিকাল থেকে আজ অবধি যা শ্রেষ্ঠ, আজ অবধি যা ভালো তা আসলে কতটুকু ভালো? তা কি অনশ্বর? ভালোর কি সত্যি সত্যি কোনো অভেদ্য মাপকাঠি আছে? মেলা মানেই মিলনমেলা। মেলা মানেই উৎসব। মেলা মানেই কিছুটা ছেড়ে দেয়া। মেলার নিয়ম যদি হয় স্কুল শিক্ষকের বেতের আগার মতো তা হলে সে মেলার আনন্দটা কোথায় থাকবে বা কোথায় দাঁড়াবে তা এই মুহূর্তে ঠিক চিহ্নিত করা কঠিন। গ্রন্থমেলাকে হালকা চালে হাতের মুঠোয় নিয়ে মুক্তনৃত্য করার কিছু নেই। অনুষঙ্গগুলো এক করে হাওয়ায় ছেড়ে দিয়ে পানের খিলি মুখে পুরে খিলখিল করে রাঙা ঠোঁটে হাসলে সব মিটে গেল, তাও নয়। গ্রন্থমেলাটির সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির প্রাণ একসুতায় সেলাই হয়ে গেছে এতদিনে। গ্রন্থমেলার সঙ্গে এখন আবেগ-উত্তেজনা, আনন্দ-বিনোদন, মান-সম্মান, অর্থনীতি-সমাজনীতি জড়িয়ে রয়েছে। আয়োজকদের খেয়াল রাখতে হবে, এত বড় আয়োজন কি শুধু অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে, পাঠকের কথা ভেবে, প্রকাশকের টিকে থাকার জন্য, ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে লালন করার দরকারে? নাকি এই বইমেলা থেকে কোনো মেসেজ ছুড়ে দেয়ার জন্য? কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে, এতে একটি মেসেজ যেন থাকে। এই মেলায় এসে প্রতিটি মানুষ যেন একটি বার্তা নিয়ে যেতে পারে যা তাদের মন ও মননকে শানিত করার সক্ষমতা রাখে। শত উৎসাহে, আনন্দে এবার ও প্রতিবারই আরো আরো নন্দিত হয়ে উঠুক বইমেলা, প্রাণের বইমেলা। বর্ধিত হোক এর আয়তন, গুণগত মান। এই অমর একুশে প্রন্থমেলা একদিন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, সারা বিশ্বের সাহিত্যানুরাগীদের এক কেন্দ্রে এনে হাজির করুক এমনটাই বাংলার বাঙালির চাওয়া। কবি ও সংবাদকর্মী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App