×

সম্পাদকীয়

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন শুদ্ধাচার

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:২৩ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এ হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ প্রবণতা অর্থনীতিতে চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। ওয়াশিংটন থেকে সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়। অর্থনীতি ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়ছে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশ কখনোই অর্জন করতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেছে শুধু নেপাল। দেশটির খেলাপি ঋণ মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আইন ও নীতির কঠোর বাস্তবায়ন করে দ্রুত খেলাপি ঋণ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কাও। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়লেও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরসহ পরবর্তী অর্থবছরেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরেই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে রাজস্ব কাঠামোর সংস্কারে তেমন অগ্রগতি না থাকায় শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ্বাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না, উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, উচ্চ আদালতে রিট, সর্বোপরি বিচার না হওয়ার কারণেই বড় বড় অর্থ আত্মসাৎ ও ঋণখেলাপির ঘটনা বাড়ছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা, রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে আর্থিক খাতের লুটেরারা উৎসাহিত হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে যেন রিকভারি এজেন্টরা জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও গভীর মনোযোগ দিতে হবে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি সংস্কার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App