×

অর্থনীতি

চীনা পণ্যের দাম বাড়ার নেপথ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৪৮ পিএম

দেশের তৈরি পোশাক খাতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। অন্তত দুই মাস পর যে প্রভাব শুরু হওয়ার কথা, তা এখনই শুরু হয়ে গেছে। নতুন করে রপ্তানি আদেশ (অর্ডার) পাওয়া কিংবা পুরনো আদেশের পণ্য সঠিক সময়ে শিপমেন্ট দেয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। আর দেশে মজুত থাকা চীনা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকৃত অর্থে পোশাক খাতের পরিস্থিতি নির্ভর করবে করোনো ভাইরাসের স্থায়িত্বের ওপর। ছুটি শেষে চীন থেকে পণ্য পরিবহন শুরু হলে অল্পমাত্রার এই অভিঘাত সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেও তাদের মতো।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চীনের বাজারে ৫৫ কোটি ডলার ফিনিশড প্রোডাক্ট রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে টেক্সটাইল ও কাঁচামাল মিলিয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা পুরো গার্মেন্টস খাতের অর্ধেক। সোয়েটার আর ওভেন খাত মূলত চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। যদিও মধ্য জানুয়ারি থেকে বন্দরে নোঙর থাকা জাহাজের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন তাদের হলিডের সময় বাড়িয়েছে। ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় একটি ধাক্কা লাগবে। কারণ ওখান থেকে প্রাথমিক উপকরণ আনতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চীনের সঙ্গে চলাচল বন্ধ থাকায় বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে। শুধু গার্মেন্টস নয়, সব খাতেই ধাক্কা লাগবে। করোনা ভাইরাসের কারণে দুই মাস পরে যে প্রভাব পড়ার কথা ছিল, তা এখনই শুরু হয়ে গেছে। কাঁচামাল, কেমিক্যাল সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীরা নিটের প্রাথমিক সব উপকরণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, তাদের উৎপাদিত উপকরণের প্রাথমিক উৎস চীন, যদিও তারা বাড়তি দামে এখনো কোনো উপকরণ আনেননি। ডায়িং, গ্লোবাল সল্ট, সোডা, ডাইসসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে অ্যাকসেসরিজ, গাম টেপ ও স্কচ টেপেরও। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, দুই মাস পর বাজারে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। দেশের তৈরি পোশাক খাত নিত্যপণ্য, মেশিনারিজ ও কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।

করোনা ভাইরাসের ফলে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং সেক্টরের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। চীনে এখনো কারখানাগুলো বন্ধ। কিছু কাঁচামালের সংকট এখনই দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা পোশাক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীন থেকে শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় দেশের কারখানাগুলো পণ্য উৎপাদন করে সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে পারবে কি না তা নিয়েও অনেকের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চীন থেকে গার্মেন্টেসের অধিকাংশ উপকরণ আসে। মেশিনারিজের পার্টসও আসে। করোনা ভাইরাসের ফলে সাপ্লাই চেইনে এরই মধ্যে একটা প্রভাব পড়েছে। যদি কোনো কারণে এটি একমাস স্থায়ী হয়, তাহলে আরো বিরূপ প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে যেসব অর্ডার নেয়া হয়েছে, তার উপকরণের জন্য বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। আর চীন থেকে সবচেয়ে সস্তায় উপকরণ পাওয়া যেত। যদি অন্য বাজার থেকে কিনতে হয় তাহলে আরো বেশি দাম দিতে হবে। এর ফলে সময়েরও অপচয় হবে, বাড়তি খরচ হবে অর্থেরও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App