×

সারাদেশ

চিকিৎসক সংকটে ভোলার চিকিৎসা বরিশালে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:৫৬ পিএম

চিকিৎসক সংকটে ভোলার চিকিৎসা বরিশালে

ভোলা সদর হাসপাতাল। ছবি: প্রতিনিধি।

চিকিৎসক সংকটে ধুকছে ভোলার স্বাস্থ্যবিভাগ। জেলার সদর হাসপাতাল, একটি টিভি ক্লিনিক, নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ও ৬২টি ইউনিয়ন ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে জেলা সদর হাসপাতালের ওপর এখানকার মানুষ নির্ভরশীল থাকলেও সেখানে চিকিৎসকের ১০টি পদ শূন্য রয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে গাইনি, কার্ডিওলজিস্ট, সার্জারি ও চক্ষুসহ গুরুপ্তপূর্ণ বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য। এসব গুরুপ্তপূর্ণ পদ শূন্য রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। অনেক রোগীকে আবার বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। জেলার মো ২০৬টি চিকিৎসক পদের ৮৩টিই শূন্য। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন জেলার ১৮ লাখ মানুষ।

এদিকে জেলার মানুষকে উন্নত সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২৫০ শয্যার আধুনিক একটি জেনারেল হাসপাতাল স্থাপিত হলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। সেটি কবে নাগাদ চালু হবে তার নির্ধারিত সময় নির্ধারন হয়নি। যে কারণে উন্নত চিকিৎসা সেবাও থেকেও বঞ্চিত ভোলার মানুষ। তবে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি চালু হলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন জেলা সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, জেনারেল হাসপালটি চালুর অনুমোদনের অপক্ষোয় রয়েছে।

অন্যদিকে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানকার মানুষকে ঢাকা বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে অন্যদিকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে জেলার মানুষকে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, ভোলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছ। এখানে ডাক্তারের ২২টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১১ জন। অন্যদিকে সদরের টিবি ক্লিনিকে নেই কোনো চিকিৎসক। এখানে দুটি মাত্র পদ থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসা নেই। ৫০ শয্যার বোরাহনউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেখানে ডাক্তারের ২১টি পদ থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৯ জন। এখানে চিকিসকের ১২টি পদ শূন্য।

দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি পদের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৭ জন। এখানকার শূন্য রয়েছে ১৪টি পদ। খায়েরহাট হাসপাতালেও চিকিৎসা সংকট। এখানে চিকিৎসকের ৯টি পদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৬ জন। ৫০ শয্যার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে ১১টি পদই শূন্য। এছাড়াও চরফ্যাশন ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২১ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১২ জন। এখানে চিকিৎসকের ৯টি পদ শূন্য। এছাড়াও তজুমদ্দিনে ৪, মনপুরায় ৫ ও দক্ষিণ আইচা হাসপাতালের একটি পদ শূন্য রয়েছে।

শুধু তাই নয়, জনবল সংকটে ধুঁকছে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ক্লিনিজগুলোও। জেলার সাত উপজেলার ৬২টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে জেলার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ভোলা সদর হাসপাতালে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কার্ডিওলজিস্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ নেই। এছাড়াও জেলার অন্যনান্য হাসপাতালে সার্জারি, গাইনি, কার্ডিওলজিস্ট ও চক্ষু চিকিৎসব না থাকায় চিকিৎসা সেবা অনেকটা ভেঙে পড়েছে।

জনবল সংকটের পাশাপাশি সমস্যা রয়েছে প্রয়োজনীয় উপকরণেরও। বেশিরভাগ হাসপাতালে ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন নষ্ট। হচ্ছে না বড় ধরনের কোনো অপারেশন। ক্লিনিক বা ডায়াগনিস্টর সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। টিবি ক্লিনিকে চিকিৎসব না থাকায় যক্ষা রোগীরাও ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ওই সব রোগীদের যেন ভোান্তির শেষ নেই।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সুত্রে আরো জানা গেছে, সম্প্রতি ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ভোলায় জেলায় ৬৯ জন চিকিৎসক পদায়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও চিকিৎসক সংকট কমছে না। চিকিৎসক সংকট লেগেই রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তৈয়বুর রহমান বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতি মাসেই চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত জনবল দেয়া হয়নি। তবুও আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। কিছু হাসপাতালে ইউনিয়ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে, সেটি চালু হলে স্বাস্থ্য সেবার এমন সমস্যা আর থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App