×

রাজনীতি

গোপনে প্যারোলের প্রস্তুতি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:১৮ এএম

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চলছে প্যারোলের প্রস্তুতি। খালেদার পরিবার ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংগোপনে এগিয়ে নিচ্ছেন গোটা প্রক্রিয়া। সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলের আবেদন করা হবে। এমনই আভাস মিলেছে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যে কোনো মূল্যে তাকে মুক্ত চান পরিবারের সদস্যরা। এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ত্বরান্বিত করতে তার পরিবারের সঙ্গে থেকে প্যারোল প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার কাজ করছেন। প্যারোল আবেদন করলে কোনো কঠিন শর্ত ছাড়াই যেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয় তা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলে দেন-দরবার চলছে।

সূত্র জানায়, এ প্রক্রিয়া শুরু হয় গত মাসের মাঝামাঝিতে। এর অংশ হিসেবেই গত ১১ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার সর্বাধুনিক সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বোনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। এমনকি প্যারোলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য মির্জা ফখরুল তাকে টেলিফোনে অনুরোধ করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না মির্জা ফখরুল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গুলশানে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, এটা ওনাকে (ওবায়দুল কাদের) জিজ্ঞেস করুন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। এমনকি দলের নেতারা কিছু জানতে চাইলেও এড়িয়ে যান তিনি। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে মির্জা ফখরুলের কাছে এক নেতা সরাসরি জানতে চান ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্যারোল নিয়ে কী কথা হয়েছে তার। কিন্তু কোনো জবাব না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করেও আশাহত দলটির নেতারা। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় বিব্রত সিনিয়র নেতারা। এতে দলের দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন অনেকেই। তারা বলছেন, ফোন করলেন ফখরুল, জবাব কী এলো সেটা তো জানতে পারলাম না। ফোন করা মানে তো নতি স্বীকারই। তাহলে আর লুকোচুরির কী আছে? তবে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে এখন আইনি লড়াই ও রাজপথের আন্দোলনই শেষ ভরসা বলছেন তারা।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, আমরা জানতে চাই কী কথা হলো তাদের মধ্যে (কাদের-ফখরুল)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের তো কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। ‘ম্যাডামের শরীরের অবস্থা ভালো নয়। তার মুক্তিই এখন সবচেয়ে জরুরি। সেটা প্যারোল কিংবা জামিন যাই হোক না কেন। কিন্তু আমাদের কাছে লুকোচুরি করে কেন প্যারোলের প্রস্তুতি নেয়া হবে। মহাসচিব সব বিষয়ই এড়িয়ে যান। নিজেদের অসহায় লাগে আজকাল’। এ নিয়ে জোটের নেতারাও অন্ধকারে। দলের এক অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আসলেই কি আপনারা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তি চান? চাইলে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তি আদায় করুন। তা না করে ফোন করলেন- কী কথা হয়েছে ফোনে?

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলীয় চেয়ারপাসন অসুস্থ। আমরা তাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচিও থাকবে। প্যারোলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমরা জানি না। মহাসচিব হয়তো জানতে পারেন।

সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আইজীবীরা জানিয়েছেন, তারা যতবার খুশি জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতেই হাইকোর্টে ফের জামিন আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। দুয়েক দিনের মধ্যেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ফের জামিন আবেদন করবেন তার আইনজীবীরা। জামিন আবেদনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে বলে সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আইনের সব রকম অস্ত্র ব্যবহার করব। জামিন চেয়ে বারবার আবেদন করব। পরিবার প্যারোল চাইবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। তিনি বলেন, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আরো আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন ছিল। দুই বছর আগেই এ প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন আমাদের নেতারা শোনেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App