সেলফি যেন মরণনেশা
nakib
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২৫ পিএম
সেলফি আসক্তি মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শুধু অল্প বয়সীরাই নয়, বয়সী মানুষও এখন সেলফি-সংস্কৃতির শিকার। সেলফি যেন এখন মরণনেশা। দুর্গম এলাকায়, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। চলন্ত ট্রেনের সামনে, বহুতল ভবনের ছাদে, হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে, পাহাড়ের চূড়ায় সেলফি তুলতে গিয়ে বিশ্বে এ পর্যন্ত অনেক মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের দেশেও এই সংখ্যা কম নয়। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কুড়িলে রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ গেছে ইমরান হোসেন (১৬) নামে এক ছাত্রের। এ সময় আহত হয়েছে তার সহপাঠী আল রাফি (১৬)। এভাবে আর কত মানুষ সেলফির বলি হবে? এমন ভয়ঙ্কর শখে অবশ্যই লাগাম টানতে হবে। জানা যায়, রবিবার সকালে রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল ইমরান হোসেন ও আল রাফি। পেছন দিয়ে ট্রেন আসতে থাকলে তারা ট্রেনসহ সেলফি তোলার চেষ্টা করে। ট্রেন কাছাকাছি চলে এলে তারা রেললাইন থেকে সরার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ট্রেনের ধাক্কায় দুজন আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক ইমরান মারা যায় বলে জানান। আল রাফিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে এভাবে অহরহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কখনো ট্রেনে কাটা পড়ছেন তো কখনো গভীর জলে উল্টে গিয়েছে বোট। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে অন্তত ২৫৯ জন সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। মুঠোফোনের নানা অপব্যবহারও লক্ষ করা যাচ্ছে। রাস্তা পার হওয়ার সময় মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। এটা করতে গিয়েও অনেকের প্রাণ গেছে। মার্কিন গবেষকরা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলার অভ্যাসের সঙ্গে মানসিক ব্যাধির সম্পর্ক রয়েছে। নিজের চেহারার প্রতি অতি আকর্ষণ অনুভব করা মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। গবেষকরা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত নিজের ছবি তোলার প্রবণতা এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে দেয়ার এই মানসিক সমস্যার নাম ‘সেলফিটিস’। সেলফি-নেশা কিংবা মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপারের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, সেলফি তুলতে গিয়ে আমরা এতটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছি- স্থান-কাল-পাত্র গুলিয়ে একাকার করে ফেলছি। ‘স্টাইলিস্ট’ পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে নিতান্তই আহাম্মক হিসেবে উপস্থাপন করছি। সেলফির ফাঁদ পাতা ভুবনে, কখন কে মরে তা কে বা জানে! এই ভয়ানক ‘রোগ’ থেকে বাঁচা খুব জরুরি। এই বিষয়ে সচেতনতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক, সামাজিককর্মী, গণমাধ্যম সর্বোপরি সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকেই।