×

অর্থনীতি

বাড়ছে কন্টেইনার জট, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০৩ এএম

বাড়ছে কন্টেইনার জট, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

কন্টেইনার জট।

একে তো করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে আমদানি পর্যায়ে একটা অলিখিত খড়া চলছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম প্রান্তে আইসিডি কমলাপুরগামী কন্টেইনার জট বাড়ছে। এতে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত সময় গুনতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এই কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এই কন্টেইনার জট কমিয়ে দ্রুত লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রমে গতি ফেরাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস এসোসিয়েশন ও টার্মিনাল হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠক ও হয়েছে। কিন্তু আদতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে আইসিডি কমলাপুরের পণ্য পরিবহনে প্রতি মাসে ৭৫টি ট্রেন চলাচল করছে। যা কমলাপুর আইসিডির পণ্য পরিবহনে যথেষ্ট না হওয়ায় চট্টগ্রাম প্রান্তে কন্টেইনার জট বাড়তে শুরু করেছে। এতে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। এই সংকট উত্তরণে ৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ৭টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- কমলাপুরগামী ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে আইসিডি প্রান্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ট্রেন লোডিং-আনলোডিং ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ৩৬০ টিইইউএস কন্টেইনার পরিবহন করতে পারে কিন্তু রেলওয়ে প্রতিদিনি কন্টেইনার পরিবহন করছে মাত্র ২শ। অর্থাৎ সক্ষমতার মাত্র ৫৫ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। যার কারণে চট্টগ্রাম প্রান্তে আইসিডিগামী কন্টেইনারের জট দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন্দরের কন্টেইনার ওঠানামা বাড়লেও কন্টেইনার পরিবহন বাড়াতে পারছে না রেলওয়ে। ইতোমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে আইসিডিগামী কন্টেইনার।

তবে কন্টেইনার জটের বিষয়টি মানতে নারাজ আইসিডি কমলাপুরের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার আহমেদুল করিম চৌধুরী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কমলাপুরে পণ্য আমদানি আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম প্রান্তে কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে চট্টগ্রাম প্রান্তে হাজার খানেক কন্টেইনার আটকে থাকাকে সংকট ভাবলেও কন্টেইনার জট বলতে রাজি নন তিনি।

বৈঠকে কন্টেইনার টার্মিনালের হ্যান্ডিলিংয়ের দায়িত্বে থাকা সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধি আইসিডির লোড-আনলোডিং প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে বৈঠকে জানান। পাশাপাশি এই কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ পণ্য ডেলিভারির সময় কিছু ট্রাক কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি সময়ে রেলওয়ে টিএক্সআর ওয়াগন চেক করতে অতিরিক্ত ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগে যা আগে ছিল না। এছাড়া ইয়ার্ডে আলো স্বল্পতা, নানা জায়গায় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্ব) চিফ অপারেটিং এ এম এম শাহনেয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, রেলওয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য পরিবহন পরিচালনা করছে। এর বাইরে তো আর ট্রেন দেয়া যাবে না। ইতোমধ্যে আমরা আসা-যাওয়া দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করে পণ্য পরিবহন করছি। তারপরও চট্টগ্রাম প্রান্তে হাজারের উপরে জট সৃষ্টি হয়েছে। যে পরিমাণে আমদানি বেড়েছে পণ্য পরিবহনে শ্লথগতি থাকলে আরো বেশি কন্টেইনার জট তৈরি হতো।

তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন ঢাকা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফরিদ উদ্দিন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এসব জট ইচ্ছে করেই করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের অবহেলার জন্য মূলত এই জট তৈরি হয়েছে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এই কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এর ২০১৭ সালে এসব বিষয়ে চুক্তিসই হলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাদের পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বে উদ্যোগ নিচ্ছে না। যার কারণে দিন দিন কন্টেইনার জট বেড়েই চলেছে।

জানা গেছে, রেলওয়ে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের অনীহা দূর করতে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, কাস্টমসের প্রতিনিধি, সিএন্ডএফ, শিপিং এজেন্টদের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে রেল ভবনে বৈঠক হয়। এতে পণ্য পরিবহনে গতি আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এই বৈঠকের প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফের চট্টগ্রাম প্রান্তে জমে গেছে হাজারেরও বেশি আইসিডিগামী পণ্যবাহী কন্টেইনার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App