করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ফের ডেঙ্গুর ভীতি
nakib
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:২৭ পিএম
বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের আরেক নাম ‘করোনা ভাইরাস’। সেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। তবে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। যা কিছুটা হলেও স্বস্তির। তবে করোনা আতঙ্কের রেশ ধরেই দেশে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
গত বছর ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। এর আগে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, আগে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন তা বছরজুড়েই দেখা যায়। এদিকে শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি) ৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চলতি বছরে পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ২৩০ জন। রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা।
জানা যায়, মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে তাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘ডেঙ্গু সার্ভিলেন্স এন্ড প্রেডিকশন প্রোজেক্ট’-এর আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা শাখা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে পহেলা জানুয়ারি থেকে মশার উপস্থিতি দেখা হচ্ছে। এ জরিপ চলবে আগামী দুই বছর। জরিপের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসেও রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী জানুয়ারিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরীবাগ ও শাহবাগ এলাকায় মশার ব্রুটো ইনডেক্স ছিল সবচেয়ে বেশি-২৬ দশমিক ৬৭। এ ছাড়া লালমাটিয়া-মোহাম্মদপুরে ১০, গুলশান-বনানীতে শূন্য, বাসাবো-খিলগাঁওয়ে ১৩ দশমিক ৩৩, শাঁখারীবাজার ও পাটুয়াটুলীতে ১৩ দশমিক ৩৩ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এখন পর্যন্ত গুলশান-বনানী এবং লালমাটিয়া-মোহাম্মদপুর এ দুটি অঞ্চলের তথ্য নেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, গুলশানে ব্রুটো ইনডেক্স বেড়ে ২০ হয়েছে। লালমাটিয়ায় কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জানুয়ারিতে ব্রুটো ইনডেক্স পাঁচের নিচে থাকার কথা। জানুয়ারিতে মশার এতটা উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া জরিপে আমরা রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছি। যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। মার্চ মাসের মধ্যেই যদি মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বেশি হতে পারে। বিশিষ্ট এই কীটতত্ত্ববিদ আরো বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের কয়েকটি স্ট্রেন বা প্রকার রয়েছে। এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে গত বছর যাদের ডেঙ্গু হয়নি তারা এ বছর বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। এ ছাড়া গ্রামেও এটি বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মার্চ মাসেই এডিস মশার উৎপত্তিস্থলগুলোকে ধ্বংস করার পরামর্শ দেন তিনি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু একবার হলে আর হবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে টাইপের এডিস মশায় কামড়ানোর ফলে কারও একবার ডেঙ্গু হয় সেই একই টাইপের ভাইরাস থেকে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবে না। তবে এডিস মশার বাকি তিনটি টাইপের ভাইরাস থেকে তিনি আবারো আক্রান্ত হতে পারেন। বরং দ্বিতীয়বার হলে তার মাত্রা বেশি হয়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুবিষয়ক কর্মসূচির সাবেক ব্যবস্থাপক ডা. এম এম আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, জয়বায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়লে মশার প্রজনন দ্রুত হয়। স্ত্রী জাতীয় মশার কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এডিস মশা ও এর প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। এই প্রস্তুতিটা আগে থেকেই শুরু করতে হবে।
মশার উৎপাত নিয়ে নাগরিকের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। গত বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা বেশ বিতর্কিত হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের জনবল ও মেশিন-যন্ত্রপাতির সংকটের কথা বলে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরজুড়ে কাজ করার ঘোষণা থাকলেও ভিআইপি এলাকা ছাড়া মশা নিধন কার্যক্রম শূন্যের কোটায়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের মশা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। আর এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন জানান, ব্রুটো ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলেই তারা বিষয়টি বিবেচনায় নেন। কিউলেক্স মশার অন্যতম প্রজননস্থল সরু নর্দমাগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো যায় না। সেখানে কীভাবে তারা কাজ করবেন তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সংস্থার জলাধারে কচুরিপানা আছে, যেগুলো নিয়েও তারা কাজ করছেন।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া জরিপে আমরা রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছি। যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। মার্চ মাসের মধ্যেই যদি মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বেশি হতে পারে। বিশিষ্ট এই কীটতত্ত্ববিদ আরো বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের কয়েকটি স্ট্রেন বা প্রকার রয়েছে। এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে গত বছর যাদের ডেঙ্গু হয়নি তারা এ বছর বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। এ ছাড়া গ্রামেও এটি বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মার্চ মাসেই এডিস মশার উৎপত্তিস্থলগুলোকে ধ্বংস করার পরামর্শ দেন তিনি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু একবার হলে আর হবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে টাইপের এডিস মশায় কামড়ানোর ফলে কারও একবার ডেঙ্গু হয় সেই একই টাইপের ভাইরাস থেকে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবে না। তবে এডিস মশার বাকি তিনটি টাইপের ভাইরাস থেকে তিনি আবারো আক্রান্ত হতে পারেন। বরং দ্বিতীয়বার হলে তার মাত্রা বেশি হয়।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুবিষয়ক কর্মসূচির সাবেক ব্যবস্থাপক ডা. এম এম আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, জয়বায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়লে মশার প্রজনন দ্রুত হয়। স্ত্রী জাতীয় মশার কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এডিস মশা ও এর প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। এই প্রস্তুতিটা আগে থেকেই শুরু করতে হবে।
মশার উৎপাত নিয়ে নাগরিকের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। গত বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা বেশ বিতর্কিত হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের জনবল ও মেশিন-যন্ত্রপাতির সংকটের কথা বলে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরজুড়ে কাজ করার ঘোষণা থাকলেও ভিআইপি এলাকা ছাড়া মশা নিধন কার্যক্রম শূন্যের কোটায়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের মশা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। আর এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন জানান, ব্রুটো ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলেই তারা বিষয়টি বিবেচনায় নেন। কিউলেক্স মশার অন্যতম প্রজননস্থল সরু নর্দমাগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো যায় না। সেখানে কীভাবে তারা কাজ করবেন তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সংস্থার জলাধারে কচুরিপানা আছে, যেগুলো নিয়েও তারা কাজ করছেন।