×

মুক্তচিন্তা

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সচেতনতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:৪৯ পিএম

বাংলাদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল। বাঙালির সেই আত্মত্যাগ আজ বিশ্ব ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। এ আত্মত্যাগ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বিশ্ব সমাজকেও অনুপ্রাণিত করেছে। সালাম, জব্বার, বরকত, রফিকসহ শহীদদের রক্তে লেখা একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি সারা দুনিয়ায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। রক্ত দিয়ে বাঙালিরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করলেও ভাষা আন্দোলনের সাড়ে ৬ দশক পর প্রশ্ন উঠছে বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আমরা তৎপর কতটুকু? এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার অভাব থাকায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে প্রমিত বাংলা ভাষা। গণমাধ্যম প্রমিত বাংলা শেখার অন্যতম ক্ষেত্র হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের একাংশ যেন বাংলা ভাষা বিকৃত করাকে নিজেদের কর্তব্য বলে বেছে নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এক সময় প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র বলে বিবেচিত হতো দেশের বিদ্যালয়গুলো। কিন্তু সে ঐতিহ্য এখন অতীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিদ্যালয়গুলোতে প্রমিত বাংলা শেখার যথাযথ সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে প্রমিত ভাষায় কথা বলার চর্চাও হারিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি ঢঙে ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা বলা তরুণদের একাংশের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যে মাতৃভাষার জন্য এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে, সে বাংলা ভাষাকেই হেয় করা হচ্ছে। পরাধীনতার যুগেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব শহর-নগরের দোকানপাটের সাইনবোর্ডে বাংলার উপস্থিতি ছিল প্রায় একক। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই ঐতিহ্যে যেন ছেদ পড়েছে। ইংরেজি সাইনবোর্ডের দাপটে এ দেশের মানুষ যে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় অকাতরে বুকের রক্ত দিয়েছে সে সত্যটি নিষ্প্রভ হতে চলেছে। আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বিস্তৃতি। আকাশ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দির আধিপত্য জাতীয় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাষার বিকৃতি রোধে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এখনই সচেতন হতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রাম, বুকের তাজা রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে মাতৃভাষার যে মর্যাদা আমরা অর্জন করেছিলাম, সে ভাষার প্রতি ন্যূনতম উদাসীনতা কাম্য নয়। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। সঙ্গত কারণেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ব্যবহারিক জীবনে বাংলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তার অর্থ এই নয়, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষা শেখা বা জানা যাবে না। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশেষ করে ইংরেজি জানা অপরিহার্য। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন বিশ্বায়নের নামে সাম্রাজ্যবাদ আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চেপে না বসে। বাংলা ও ইংরেজির সংমিশ্রণ পরিহারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। তবে এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার পরিসংখ্যান বলছে, বাংলা শব্দভাণ্ডারে ৪৪ শতাংশ তৎসম, ৪.৫৫ শতাংশ বিদেশি ও ৫১.৪৫ শতাংশ দেশি ও অতৎসম শব্দ রয়েছে। অর্থাৎ বাংলা ভাষার শব্দসম্ভার দেশি-বিদেশি, সংস্কৃতি যে ভাষা থেকেই আসুক না কেন, তা বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদ। এগুলো বাংলা ভাষার সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে, বাংলা থেকে এদের আলাদা করার কথা চিন্তা করা যায় না। বিদেশি শব্দ পরিহার করতে গিয়ে দুর্বোধ্য বাংলা শব্দের প্রয়োগ কাম্য নয়। প্রমিত বাংলা চর্চায় আইন প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। বিদেশি আকাশ সংস্কৃতি রোধেও নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। বিশেষ করে দোকানপাট ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাংলাকে বিশ্বায়নের সঙ্গী বানাতে এখনই সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করি। উত্তরা, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App