×

অর্থনীতি

পণ্যে করোনার প্রভাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৭ এএম

করোনা ভাইরাসের ঝাঁকুনিতে একরকম নিথর হয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। ‘বিশ্বের সব দেশের কারখানা’ হিসেবে খ্যাত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন বহু দেশ। বাংলাদেশেও আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের ৮০ ভাগেরও বেশি জোগানদাতা চীন। করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হবে এমন আশঙ্কায় ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম।

যদিও চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই দেশটির আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ও ব্যবসায়ীরা বিকল্প ব্যবস্থার কথা না ভাবলে আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা ভাইরাসের গুজব ছড়িয়ে এখনি এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা- অভিমত সাধারণ ক্রেতা থেকে বিশেষজ্ঞসহ সবারই।

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ইতোমধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। নতুন করে এলসি খোলা তো হচ্ছেই না, আগের করা এলসি পণ্যের জাহাজিকরণও বন্ধ। বন্ধ রয়েছে ব্যবসায়ী এবং কর্মরতদের আসা-যাওয়াও। এদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সব ধরনের পেঁয়াজ ৩০ টাকা, আদা ৪০ টাকা এবং রসুন কেজিতে ৬০ টাকা করে দাম বেড়েছে।

ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের গুজব ছড়িয়ে বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, বাজার মানিটরিংয়ের জন্য। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বর্তমানে এলসি খোলা বন্ধ রয়েছে। তাই এখনই সরকার ও ব্যবসায়ীদের বিকল্প পথ ভাবতে হবে। তা না হলে আগামী রমজানের বাজারে এর বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি। একই আশঙ্কার কথা জানালেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। রমজানের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এখনই অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এমনিতেই আমাদের দেশে রমজানে সব জিনিসের দাম বাড়তি থাকবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী রমজান শান্তিতে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দিন দিন বাড়ছে এলাচির দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এক বছরে দাম বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ। কিছু দিন আগে দাম আরো বেশি ছিল। এখন সে তুলনায় কিছুটা কম। নতুন করে বেড়েছে দারুচিনির দাম। দারুচিনি এখন প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে যে মরিচ পাওয়া যায়, তা এখন ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তা ছাড়াও চীনা পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা এবং তুরস্কের পেঁয়াজ বেড়ে ৮৫-৯০ টাকা দরে। এ ছাড়াও মিয়ানমারের আদা প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। বাজারে এখন চীনা আদা পরিমাণে কম হলেও এ পণ্যটির দামও ৩৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া চীনা রসুনের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

ঢাকার মৌলভীবাজারের গরম মসলা ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েতুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, কিছুদিন আগে এলাচ দানার দাম বাড়তি থাকলেও বর্তমানে পাইকারিতে এই মসলাটি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। বর্তমান বাজারে বাড়তি দামের বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষী করে তিনি বলেন, পাইকারির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে রমজানের বাজারে মসলার দামে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি

বলেন, চায়না থেকে শুধু দারুচিনি আমাদের দেশে আসে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম থেকেও এই পণ্যটি আমদানি করা হয়। সুতরাং রমজানের মসলার বাজারে করোনার প্রভাব না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন এনায়েতউল্লাহ।

কাওরানবাজারের খান এন্ড সন্স বাণিজ্যালয়ের পেঁয়াজ রসুন ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, কিছুদিন অর্ডার বন্ধ থাকার কারণে পেঁয়াজ ও রসুন দেশে আসতে পারছে না। এ জন্য বাজারে দাম বাড়ছে। তবে অর্ডার এলেই আবার দাম কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে আগামী রমজানে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। লোকমান বলেন, চায়না থেকে পণ্য আসতে এক মাস ২৫ দিন লাগে। তাই এখন আগের এলসি করা পণ্যই আসছে। পাশাপাশি দেশি রসুনও রয়েছে। সুতরাং রমজানে এর কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।

এদিকে বাজারে বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের পাশাপাশি অন্য প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এ প্রসঙ্গে একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্যই বাজারে গুজব ছড়িয়েছে, চীন থেকে পণ্য আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। এভাবে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কয়েক ধাপে বাড়িয়েছে তারা।

তবে করোনা ভাইরাস নিয়ে এখনো আশঙ্কাজনক কিছু নেই বলে মনে করেন দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে করোনা ভাইরাসের সংকট দীর্ঘ হলে এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী রমজানকে ঘিরে আমরা চীন থেকে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারির (মঙ্গলবার) পর থেকে বেশকিছু চালানের শিপমেন্ট শুরু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App