×

সারাদেশ

শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর স্কুলে তালা ঝুলালো গ্রামবাসী!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:৪৯ পিএম

শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর স্কুলে তালা ঝুলালো গ্রামবাসী!

ক্লাসে ক্লাসে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসী। ছবি: প্রতিনিধি।

শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর স্কুলে তালা ঝুলালো গ্রামবাসী!

বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রতিনিধি।

শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর স্কুলে তালা ঝুলালো গ্রামবাসী!

লাগিয়ে দেয়া তালা। ছবি: প্রতিনিধি।

তখন বেলা ঠিক ১০টা ৫৫ মিনিট। বিদ্যালয় আঙিনা জুড়ে শিশু শিক্ষার্থীদের দারুণ ছুটোছুটি। কেউ খেলছে, কেউবা দুষ্টুমীতে মেতে উঠেছে। কোনো ক্লাসই হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষকের চেয়ার খালি। অন্য পাঁচজন শিক্ষকের কোথাও কেউ নেই। তাই শিশু শিক্ষার্থী ক্লাস ছেড়ে বাইরে মেতে উঠেছে খেলাধুলা আর দাপাদাপিতে। যেন বিদ্যালয় জুড়ে পিকনিকের আনন্দ। এমন দৃশ্য রৌমারী উপজেলার ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তবে ঘটনাটা একদিনের আকস্মিক কিছু নয়। বলা যায় নিত্যদিনই এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আর সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। প্রতিদিনের মতো ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত কোনো শিক্ষককে উপস্থিত হতে না দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিটি কক্ষেই তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রামবাসী। এরপর তারা বিদ্যালয় মাঠে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঠিক এমন মুহূর্তে কাকলী ও ফেরদৌসি নামের দুই শিক্ষক বিদ্যালয় উপস্থিত হন। তারা প্রথমে গ্রামবাসীকে তালা খুলে দিতে বলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় এক পর্যায়ে স্থানীয় নেতাদের দিয়ে হেনস্থা করার হুমকি দিতে থাকেন। এমন হৈ হট্টগোলের মধ্যেই ছুটে আসেন বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রশিদ। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টিও, এটিও, প্রতিমন্ত্রী সবাইকেই বিদ্যালয়ের দুর্দাশার কথা একে একে বলেছি। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। [caption id="attachment_201683" align="aligncenter" width="700"] বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০ জন। তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। তবে তাদের মধ্যে মাহফুজা বেগম ও শিউলি আক্তার নামের দুজন শিক্ষক রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ঘটনার সময় ১১টার পর বিদ্যালয়ে হাজির হন কাকলী পারভীন ও ফেরদৌসী জাহান নামে দুজন শিক্ষক। আর বাকি দুজনের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন। অপর সহকারী শিক্ষক আফজাল হোসেন ব্যস্ত আছেন ইউআরসি ট্রেনিংয়ে। আল আমিন নামে এক গ্রামবাসী জানালেন, বিদ্যালয়টিতে কোনো শিক্ষকই সময় মতো আসেন না। ঠিকমতো পড়াশোনাও হয় না। শিক্ষকরা দুপুরের দিকে আসেন আর দুপুরের পরপরেই চলে যান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খোদ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এলাকাতেই যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন হাল হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? [caption id="attachment_201684" align="aligncenter" width="700"] লাগিয়ে দেয়া তালা। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption] বিদ্যালয়ে তালা ঝোলানোর বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, দু’জন শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। আমি ও আরেক শিক্ষক প্রশিক্ষণে। সে কারণে শিক্ষক কাকলী আর ফেরদৌসীকে ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসতে বলেছিলাম। তবে তারা সময়মতো না আসায় গ্রামবাসী তালা ঝুলিয়েছে। রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ইউএনও মহোদয় এ বিষয়ে আমাকে তদন্ত করতে বলেছেন। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান বলেন, স্কুলে তালা ঝোলানোর বিষয়টি জানতে পেরেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App