×

সারাদেশ

রাণীনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:১১ পিএম

রাণীনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
নওগাঁর রাণীনগরের উপজেলায় শিক্ষার্থী ভর্তির নামে টাকা আদায়, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে টাকা আদায়, ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানান অভিযোগ উঠেছে শিয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমানের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার পূর্বদিকে একডালা ইউনিয়নে অবস্থিত ৪৬ নং শিয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমান ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ে ৮/১০ জন ভুয়া শিক্ষার্থীদের নাম উপবৃত্তি তালিকায় যুক্ত করে নিজেদের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে তালিকা প্রেরণ করেন। এর পর প্রতি মাসে মোবাইলে আসা উপবৃত্তির টাকা ভোগ করছেন। ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ জন বাক, শ্রবন ও শারীরিক প্রতিবন্দির ভাতার কার্ড করে দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করেছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকদের নিকট থেকে। এছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সময় অভিভাবকদের নিকট থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক। তবে এখানেই ক্ষ্যান্ত নয়, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন অপসারনের জন্য টেন্ডার দেয়া হলে ওই প্রধান শিক্ষকের স্বামী একই ইউনিয়নের উজালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদৎ হোসেনের নামে ভবন স্বল্প টাকায় টেন্ডার নেন। পরে টেন্ডারের বাহিরে ৫০-৬০টি ব্রেঞ্চ পর্যন্ত বিক্রয় করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শ্রাবনী, জলি, মিম জানিয়েছেন, ভাতার কার্ড করতে ম্যাডামের নাকি টাকা খরচ হয়েছে তাই আমাদের নিকট থেকে দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এক হাজার টাকা করে দিতে চাইলেও তিনি দেড় হাজারের কম নেননি। অবশ্য প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমান জানিয়েছেন ভাতার কার্ড করার পর অভিভাবকরা খুশি হয়ে আমাকে মিস্টি খাওয়ার জন্য দিয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তিতে টাকা নেয়া হয়নি প্রধান শিক্ষক এমনটি দাবি করলেও শিশু শ্রেনীতে ভর্তি সাদিয়ার অভিভাবক মনিরুল ইসলম জানান, তার মেয়ে ও চাচাতো বোন রোকেয়াকে ভর্তি করাতে ম্যাডাম আমার নিকট থেকে ২০০ টাকা নিয়েছেন। আমরা গরীব মানুষ ১০০ টাকা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু শোনেননি, ২০০ টাকায় দিতে হয়েছে। ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাছলিমার খালা আশরাফুন জানান, তাছলিমাকে ভর্তি করাতে প্রধান শিক্ষক আমার নিকট থেকে ৬০০ টাকা দাবি করেছিলেন। চার দিন ঘোরার পর ৫০০ টাকায় ভর্তি করে নিয়েছেন। উপবৃত্তির তালিকায় ভুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে স্থান পাওয়া ভাই-বোন রমজান হোসেন (১ম শ্রেনী) ও হাবিবার (৩য় শ্রেনী) বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, আমার ছেলে মেয়েরা প্রায় দেড় বছর আগে পড়া লেখা বাদ দিয়েছে। আমরা কোন উপবৃত্তির টাকা পাইনা। আরেক শিক্ষার্থী রাফির (৫ম শ্রেনী) বাবা এনামুল হক বলেন, রাফি গত দুই বছর ধরে পার্শ্ববতি দীঘিরপাড় মাদ্রাসায় পড়া লেখা করে। শিয়ালা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তির টাকা কখনো পাইনি। ১ম শ্রেনীর ছাত্রী আফিয়ার পিতা সাইদুল ইসলাম বলেন, তার মেয়ে গ্রামের নূরানী মাদ্রাসায় পড়ে। এছাড়া আরো বেশ কিছু ভুয়া শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে প্রধান শিক্ষক, তার স্বামী শাহাদৎ হোসেন এবং নিকট আত্মীয়দের ফোন নাম্বার ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমান কিছুটা সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, উপবৃত্তির তালিকায় কিছুটা গড়মিল রয়েছে। এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার শামছুজ্জামান বলেন, বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App