×

জাতীয়

খালেদার মুক্তির কৌশলে দল-পরিবার দুই মেরুতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৪৫ এএম

দিন-মাসের গণ্ডি পেরিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাজীবনে ২ বছর পেরুল আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। কারাবাসের সময় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিঃসঙ্গ বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া আর গৃহপরিচারিকা ফাতেমার সঙ্গেই গল্প করে কাটে তার দিবানিশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ৭৩০ দিনের বন্দি জীবনে পুরো জীবনধারাই বদলে গেছে খালেদা জিয়ার। বেশিরভাগ সময় তিনি চুপচাপ শুয়ে থাকেন। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। তাই বিছানায় বসেই নামাজ পড়েন। খাওয়া-দাওয়া কমে গেছে। দলের ব্যাপারে জানারও আগ্রহ নেই আগের মতো। সপ্তাহে দুদিন ডাক্তার আসে স্বাস্থ্য চেকআপে। তাদের কাছে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খুঁটে খুঁটে জানতে চান।

এদিকে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে গত দুই বছরেও কার্যকর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। আইনি লড়াইয়ের ফলাফলও শূন্য।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার অবর্তমানে অভিভাবকহীন বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরো ঝিমিয়ে পড়েছে। এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এদিকে শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ খালেদা জিয়ার কারামুক্তি চান না বলেও অভিযোগ বিএনপির কট্টরপন্থিদের। তাদের যুক্তি, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে শীর্ষনেতাদের অনেকের গুরুত্ব কমে যাবে। বছরের মাঝামাঝি সময় দলের নির্বাচিত ৭ এমপি তার মুক্তির ব্যাপারে কিছু দিন দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অভিযোগ করেছিলেন দলটির কয়েকজন শীর্ষনেতা। এরপরই ওই ৭ এমপি খালেদা জিয়ার মুক্তি তৎপরতা থেকে সরে আসেন।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা বিচারাধীন থাকলেও কারামুক্তিতে বাধা মাত্র দুটি মামলা। নানা আইনি জটিলতায় ওই দুই মামলায় মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার। এ দুটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে হবে। কিন্তু গত ১১

ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই আদেশের ফলে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির আর কোনো সুযোগ থাকছে না।

এমন বাস্তবতায়ও আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কৌশল ঠিক করছে দলটি। হাইকমান্ডের দাবি- খালেদা জিয়ার জামিনের পথে প্রধান অন্তরায় সরকারের জোরালো প্রভাব। তারপরও হাল ছাড়েননি তারা। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন জোরদারের কৌশল নির্ধারণ করছেন তারা।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে আশঙ্কায় থাকা তার পরিবার ভিন্ন চিন্তা করছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ‘অনুকম্পায়’ জামিন আবেদনের চিন্তা করছেন তারা। গত ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার বোন সেলিমা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আবেদনের কথা ভাবছেন। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অনুমোদন ছাড়া এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে নারাজ দলীয় নেতারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ে সমাবেশ, মিছিল, র‌্যালি করেছি। আমাদের চেষ্টায় ঘাটতি নেই। তবে স্বাস্থ্য ও মুক্তি নিয়ে তার পরিবারের বিশেষ আবেদনের সঙ্গে দলীয় অবস্থানের সরাসরি কোনো সংযোগ নেই। আমরা বারবার তার সঙ্গে দেখা করার আবেদন করে যাচ্ছি। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছি না। যেহেতু পরিবার দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে, সেহেতু তারাই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা জানছেন। তার চিকিৎসার যে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবার নিতে পারে।

অন্যদিকে দীর্ঘ ২ বছরেও দলীয়প্রধানকে মুক্ত করতে না পারায় ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ- শীর্ষনেতাদের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনার অভাবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে হাইকমান্ড। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে কর্মীদের নিস্তেজ করে রাখা হচ্ছে। শিগগিরই কঠোর আন্দোনের তাগিদ দিচ্ছেন তারা।

বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি : কারাবন্দি দলীয়প্রধানের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে আজ শনিবার সমাবেশ করবে বিএনপি। আজ দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

খালেদা জিয়ার দুই বছর কারাবাসের প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সকাল ১১টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর মোট চারবার গ্রেপ্তার হন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে তখন তিনি বেশি দিন আটক ছিলেন না। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৩৭২ দিন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে কারাবাস করছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App