×

সাহিত্য

প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:১৬ পিএম

প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০

প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে

বইমেলায় স্টলে পাঠকরা। ফাইল ছবি।

প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে
প্রাণের মেলার প্রাণ ফিরল ছুটির দিনে

ভাষার মাষ শুরু হলেও ঢাকা সিটি নির্বাচনের কারণে ১ দিন পর শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। টানা ৫দিন ছিলো না পাঠকের উপস্থিতি, ছিলো না তেমন বেঁচাকেনা। বাণিজ্যমেলা আর কর্মব্যস্তার কারণে জমে উঠেনি এবারের গ্রন্থমেলা। কিন্তু আজ ছুটির দিনে পাঠক, লেখক আর দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিলো চখে পড়ার মতো। প্রকাশকরাও আশা করছিলেন শুক্রবার ছুটির দিনেই মেলা তার আসল চেহারায় ফিরে আসবে। ব্যাপক লেখক, পাঠক আর দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে কাটলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম শ্রক্রবারটি। শুধু তাই নয় প্রচুর বইয়ের বিক্রিও হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে প্যাভিলিয়ন আর স্টলগুলোতে বিক্রয়কর্মীদের অবসর ছিল না মুহূর্তের জন্যেও।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার দ্বার খুলে যায় সকাল ১১টায়। শিশুপ্রহর থাকায় শিশুদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মেতে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুচত্বর। সেখান নানা বয়সের শিশুরা সিসিমপুরের হালুম-ইকরি-টুকটুকি-শিকুদের সঙ্গে গানে গানে মেতে ওঠে। ওরা নানা বিষয়ের উপর লেখা বইও কিনে। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয় লেখকরাও। মেলায় পাঠকের জোয়ার থাকবে এমনটা আগে থেকেই বলা হচ্ছিলো। তবে সেটা যে পাঠকদের জনস্রোতে পরিণত হবে সেটা ভাবেননি অনেকেই। সেদিক থেকে মেলার আগামী সময় আরও ভালো কাটবে এমনটা বলাই যায়। তবে মাঝখানে গতিটা একটু কমবে।

শুক্রবার মেলায় এসেছিলেন সবার প্রিয় সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সেলফি আর অটোগ্রাফ দিতে দিতে তিনি মেলার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত হাঁটছিলেন। তাকে ঘিরে আছে সবাই। তিনি বললেন, ভালোই লাগে এভাবে পাঠকদের ভালোবাসা পেতে। তবে সেলফি না তুলে সবাই যদি একটি করে বই কিনতো তাহলে আরো ভালো লাগতো। বইয়ের মেলায় সেলফি তোলার হিড়িকের চেয়ে পাঠকের হাতে বই দেখতে পারাটাই সুন্দর দৃশ্য হয়ে ওঠে। এবারের মেলা প্রসঙ্গে বললেন, বিস্তৃত পরিসরে হওয়ায় মেলার বিন্যাসটি চমৎকার হয়েছে। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার পাশাপাশি বই পছন্দ করতেও পাঠকের সুবিধা হচ্ছে।

মো. সাইফুর রহমানের ছোট গল্পের সংকলন ‘গুনিন’ এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শুক্রবার। বিকেল ৪টায় রাজধানীর বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি মারুফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মো. জামাল হোসেন, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অরুণ কুমার বিশ্বাস ও ফজলুর রহমান বাবু। বইটি প্রকাশ করেছে অফসার ব্রাদার্স।

শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : সকাল সাড়ে ৮টায় অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সস্ত্রীক পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ২৭০, খ-শাখায় ২১৫ এবং গ-শাখায় ৯০ জন; সর্বমোট ৫৭৫জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

মূলমঞ্চের আয়োজন: বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সৈয়দ শামসুল হক রচিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা এবং এর অনুবাদ ব্যালাড অব আওয়ার হিরো: বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খায়রুল আলম সবুজ এবং আনিসুল হক। অনুবাদকের বক্তব্য প্রদান করেন সৈয়দ শামসুল হকের মূল গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা-এর ব্যালাড অব আওয়ার হিরো: বঙ্গবন্ধু শীর্ষক অনুবাদ-গ্রন্থের প্রণেতা ড. ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক। তিনি যখন শিশুদের উপযোগী করে বঙ্গবন্ধুর জীবনী লেখেন তখন তা একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা এই কারণে একটি বড় ঘটনা। শিশুদের জন্য এরকম জীবনীগ্রন্থ বাংলা ভাষায় বিরল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র জীবন শিশুদের উপযোগী করে লেখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। ভাষার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, ঘটনা, বর্ণনার দিকে অতিরিক্ত মনোযোগী হতে হয় এবং জীবনকথা তুলে ধরতে হয় এমন একটি আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় যাতে শিশুরা মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই বইটি পড়ে। সৈয়দ হক এই কাজটি করেছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জীবনকথা শিশুদের কাছে অতি মনোরম ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন বাংলা ভাষায় এই বড় লেখক।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির হাজার বছরের কোনো এক পুণ্য-বলেই বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা জন্ম নিয়েছিলেন বাঙালির ঘরে। হতদরিদ্র, নিপীড়িত এক মানবগোষ্ঠীকে একটি জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছেন বাংলার বীর সন্তান বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জীবনকথা নিয়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের রচিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা গ্রন্থের মাধ্যমেই শিশু-কিশোরেরা বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে চিনতে শুরু করবে এবং তাঁর মতো আত্মবিসর্জন ও ত্যাগের মহিমায় দেশের প্রয়োজনে নিজেদের নিবেদিত রাখবে। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কবি নুরুন্নাহার শিরীন, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আলোক বসু এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস’ (বাফা)-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন আজগর আলীম, নারায়ণ চন্দ্র শীল, শান্তা সরকার, আল মনসুর। শুক্রবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুমার চক্রবর্তী, তুষার আব্দুল্লাহ, কাজী রাফি এবং জাহানারা পারভীন।

নতুন বই: বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মেলায় বই এসেছে ৩০৮টি । এর মধ্যে প্রথমা এনেছে আনিসুল হকের উপন্যাস ‘এখানে থেমো না’, অনন্য এনেছে মোস্তফা কামালের ‘স্বপ্নবাজ’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে অংশুমানের উপন্যাস ‘জলে ডোবা প্রাণ’, একই প্রকাশনা থেকে ড. মো. নাছিম আখতার ‘স্বপ্ন ও সাফল্যের রসায়ন’, জার্নিম্যান বুকস থেকে এসেছে সুইডিশ লেখক মনিকা ছাকের গল্পগ্রন্থ ‘অ্যাসিড ছোড়ার আগের ও পরের গল্প’ এবং তোফায়েল আহমেদের ‘রক্তঝরা মার্চ ১৯৭১: অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা’, কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে আবুল কাশেমের ইতিহাস গ্রন্থ ‘মুক্তির পরম্পরা’, সনৎ কুমার সাহার ‘ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে’ ও সৈয়দ আজিজুল হকের সমালোচনা গ্রন্থ ‘কথাশিল্পী মানিক’, পাঞ্জেরী থেকে এসেছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘উপন্যাস ত্রয়ী’, অন্যপ্রকাশ থেকে নওশাদ জামিলের কবিতার বই ‘প্রার্থনার মতো একা’।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এম আবদুল আলীম রচিত বঙ্গবন্ধু ও ভাষা-আন্দোলন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি ও আরমা দত্ত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App