×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচন : ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৫৮ পিএম

গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে জনমত যাচাইয়ের প্রধান উপায় বা মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন। এই ব্যবস্থা বিশে^র সব গণতান্ত্রিক দেশে যুগ যুগ ধরে অনুসৃত হয়ে আসছে। প্রকৃত গণতন্ত্রে উত্তরণে এটাই একমাত্র পথ। নির্বাচনে কোনো দলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগের চেয়ে নির্বাচন বর্জন গণতন্ত্রের বিকাশের পথে প্রধান বাধা। এটা কখনো দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা বা অনীহা ভোটকেন্দ্রে তাদের কমসংখ্যক উপস্থিতির কারণ। আমার বাসভবনে ১৫টি ফ্ল্যাটে ১৫টি পরিবার বাস করে। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত। আমি ছাড়া এবারের মেয়র নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যাননি। তারা নাগরিক অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকা সত্তে¡ও যাননি। ভোটকেন্দ্রে স্বল্প সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন, একাধিক দিবস ছুটি থাকার কারণে ভোটাররা ঢাকা ছেড়ে গেছেন, অনেকে ঠিকানা বদল করেছেন, গাড়ির অভাবে যেতে পারেননি, গোলযোগের আশঙ্কায় যাননি। এ ধরনের ছোটখাটো সমস্যা সব নির্বাচনেই থাকে। এদের সংখ্যা খুব সামান্য। তাদের অনুপস্থিতি নির্বাচনে খুব একটি প্রভাব ফেলে না। ১৯৮৬ সালে বিএনপি প্রথম নির্বাচন বর্জন করে এদেশে ‘নির্বাচন বর্জনের’ সংস্কৃতি চালু করে। এজন্য তাদের নেতা খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন নেত্রী’ অবিধায় অভিষিক্ত করা হয়। এই আপসহীন মনোভাব যে এদেশের রাজনীতিতে কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে তা কেউ অনুধাবন করতে পারেননি। নেত্রীর আপসহীন মনোভাবের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। জনগণের সহানুভ‚তি আদায় ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শীর্ষ নেতার নির্দেশের কারণে তারা দায়সারা গোছের নির্বাচন করেছে। একই আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে এবং যোগ্য প্রার্থীর পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী বাণিজ্য করেছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দৃষ্টিগোচর হয়নি। তারা দলের পক্ষে জনসংযোগ করেনি, শোভাযাত্রা করেনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারপত্র বিলি করেনি। ভোটকেন্দ্রে তাদের তথ্যকেন্দ্র ছিল না। ঢাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র দেখে আমার এই ধারণা হয়েছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগকে সব নির্বাচনে সক্রিয় থাকতে লক্ষ্য করা গেছে। ১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৮৫ সালে স্বৈরশাসকদের অত্যাচার, নির্যাতন ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা নির্বাচন করেছে। কখনো জয়লাভ করেছে। কখনো হেরেছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী কারাভোগ করেছে। তবু তারা নির্বাচন বর্জনের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। তারা জানে, অধিকার আদায়ের জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিএনপি বারবার নির্বাচন বর্জন করার ফলে আওয়ামী লীগ একাধিকবার একতরফা বিজয় লাভের সুযোগ পেয়েছে। নির্বাচনকে অর্থহীন করে জনগণের সহানুভ‚তি আদায়ের অপচেষ্টা করেছে। ফলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনীহা বা আস্থাহীনতা বেড়েছে, কিন্তু বিএনপির প্রতি সহানুভ‚তি বা সমর্থন বাড়েনি। দশর্করা বাঘে-সিংহের লড়াই দেখতে চায়। বাঘে-শিয়ালের লড়াই দেখতে চায় না। বিএনপি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। তাদের এই নেতিবাচক ভ‚মিকা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজনীতিতে বিএনপির অনভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের ব্যর্থতা, অদূরদর্শিতা, আদর্শহীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং সর্বোপরি স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাটছাড়া বাঁধা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। মুক্তিযুদ্ধের অবদান জনগণকে ভুলিয়ে রাখার তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এবার ঢাকার (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীদের হারার কারণ বিএনপি নিজেই। নির্বাচন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই তারা পরাজয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করেই নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে। যারা সব সময় জয়ের চেয়ে পরাজয়ের আশঙ্কায় থাকে তাদের কেন জনগণ ভোট দেবে? ভোটের আগেই ভোটের ফল জানা গেলে মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে? নির্বাচনে জেতার এই অপকৌশল বিএনপিকে ত্যাগ করতে হবে। জনগণ দেশে ইতিবাচক রাজনীতি চায়, ইতিবাচক নির্বাচন চায়। নেতিবাচক মানসিকতা কখনো কারো কাম্য নয়।

শাহ্জাহান কিবরিয়া : শিশুসাহিত্যিক ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App