×

সারাদেশ

চার দশকের অভিশাপ বেওয়ারিশ বেড়িবাঁধ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৩:১৬ পিএম

চার দশকের অভিশাপ বেওয়ারিশ বেড়িবাঁধ!

নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ গত বন্যায় ভেঙে গেলেও চলতি মৌসুমে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। ছবি: প্রতিনিধি।

চার দশকের অভিশাপ বেওয়ারিশ বেড়িবাঁধ!

নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ গত বন্যায় এভাবে ভেঙে গেলেও চলতি শুষ্ক মৌসুমে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। ছবি: প্রতিনিধি।

নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর রাণীনগর উপজেলার অংশের নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধের অভিভাবক কে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই পাওয়া যায়নি গত ৪০ বছরে। আর সে কারণে নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে ধীরে ধীরে বাঁধ ভেঙে ও মাটি ধসে একদম জমির আইলের মতো শরু হয়ে পড়েছে বাঁধ। চলতি শুষ্ক মৌসুমে ফসল রক্ষার সেই ‘ঐতিহাসিক’ বাঁধ নির্মাণ কিংবা সংস্কার না করায় আগামী বছরে বন্যা হলে আবারো বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে লাখো মানুষের ভাগ্য ও বসতির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

নওগাঁর ছোট যমুনা নদী জেলার রাণীনগর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রায় ৮০ দশকে গোনা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আহাদ আলী প্রামানিক খাদ্যের বিনিময়ে কর্মসূচির আওতায় নান্দাইবাড়ী এলাকায় প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা কাম বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি।

এর ফলে তৎকালীন নির্মিত বাঁধের দুই পাশের মাটি ভেঙে একদম জমির আইলের মতো সরু হয়ে হয়ে গেছে। প্রতিবছর ওই স্থানে বাঁধ ভেঙে রাণীনগর এবং আত্রাই এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও ঘেরের মাছ ভেসে যায়। এছাড়া শত শত বসতি ভেঙে পড়ে। ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

এলাকার রফিকুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মজিবুর রহমানসহ আরো অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন বাঁধটি সংস্কার না করায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, বন্যা এলেই কর্মকর্তারা বাঁধ রক্ষায় তোড়জোর শুরু করেন। কিন্তু পানি নেমে গেলে কারো খোঁজ পাওয়া যায় না। তাদের মতে, সংস্কার হবেই বা কী করে, যেখানে বাঁধের অভিভাকই নেই সেখানে কাজ করবেন কে?

[caption id="attachment_200838" align="aligncenter" width="1280"] নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ গত বন্যায় এভাবে ভেঙে গেছে। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption]

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা আরো জানান, ২০১৮ সালে বন্যায় নান্দাইবাড়ী-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে নওগাঁ-আত্রাই পাকা সড়কের রাণীনগর সিমানার মিরাপুর, ঘোষগ্রা, কৃষ্ণপুরসহ প্রায় ৫ জায়গায় ভেঙে যায়। ওই বছরই বন্যায় রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে তলে যায়। গত বছর একই স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়। প্রতি বছর একই স্থানে ধারাবাহিক ভাবে বাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলেও নতুন করে বাঁধ নির্মাণে কিংবা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউ। বসতি ও ফসল বাঁচাতে বাঁধটির মালিকানা নির্ণয় করে দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে উপজেলার গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান জানান, বাঁধটি সংস্কারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পর্যন্ত ধরণা দিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ বাঁধটি কোন দপ্তরের আওতায়, কে এই বাঁধের অভিভাবক তা কেউ বলতে পারেন না। ফলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগও কেউ নিচ্ছে না।

কয়েক বছর ধরে এমপি সাহেবের বিশেষ বরাদ্দ থেকে ৪০ দিনের কর্মসূচির লোক দিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় যতটুকু সম্ভব সংস্কার করা হতো। কিন্তু এবার বাঁধটির দায়িত্ব পানি উন্নয় বোর্ড নিয়েছে এবং প্রায় ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণের জন্য। তবে এখনো সংস্কারে হাত দেয়া হয়নি।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংসু কুমার সরকার বলেন, নান্দাইবাড়ী-কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধটি আমাদের আওতায় নয়। তবে সংস্কারে যদি বিশেষ কোনো নির্দেশনা বা বরাদ্দ আসে তাহলে বাঁধটি সংস্কার করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App