×

সম্পাদকীয়

দাগি আসামি যখন জামিনে মুক্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:৫৫ পিএম

দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক চক্র ভুয়া ওয়ারেন্টের রমরমা বাণিজ্য করছে। বুঝতে অসুবিধা নেই এসব চক্রের সঙ্গে আদালতের একশ্রেণির অসাধু কর্মচারী তো রয়েছেই, আইনজীবী ও পুলিশও এর সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর জামিন জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বুধবার রাজধানীর মালিবাগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি। এ সময় আরো জানানো হয়, প্রায় ১০ সদস্যের এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রায় ৫০ জন আসামির জামিনের ব্যবস্থা করেছে বলে স্বীকার করেছে। জামিন পাওয়া ওই আসামিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। জামিন পাওয়ার বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটা আদালতের বিষয়। তবে রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। দাগি সন্ত্রাসী কেউ জামিন পেলে নিঃসন্দেহে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাবেন কারাগার সংশ্লিষ্টরা। এটারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ কখন কোন দাগি সন্ত্রাসী জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা। অনেক সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। কেউ ফিরে গেছে তাদের আগের কার্যক্রমে। গোয়েন্দা সূত্রই জানাচ্ছে জামিনে মুক্ত সন্ত্রাসীরা আগের ঠিকানা ব্যবহার করছে না। নির্দিষ্ট মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছে না। কিন্তু তাদের গোপন তৎপরতা চলছে।

সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা বা তাদের বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয়ে অসঙ্গতির সুযোগে অনেক জামিনপ্রাপ্ত আসামির আর কোনো খোঁজ রাখা হচ্ছে না। কিন্তু এর প্রভাব যে কী রকম ভয়াবহ সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা সচেতন সেটাই প্রশ্ন। জামিন জালিয়াতির অংশ হিসেবে মামলার এজাহার, এফআইআর, পুলিশ প্রতিবেদন, পুলিশ ফরোয়ার্ডিং লেটার, থানার ওসি, তদন্ত কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর এবং আদালতের আদেশসহ সব নথি জাল করে চক্রের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে কখনো আসল কাগজপত্রে ঘষামাজা করা হয়। তবে বেশিরভাগ সময় হুবহু নকল তৈরি করে তারা, যা সাধারণভাবে দেখে বোঝার উপায় থাকে না। সেসব কাগজপত্র আদালতে দিয়ে আসামির জামিন আবেদন করেন অসাধু আইনজীবীরা। এ রকম কিছু ঘটনা ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্টরা এখন সতর্ক হয়ে উঠেছেন। জামিন জালিয়াতি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরেও এসেছে। গত বছর ২২ মে একটি মামলার শুনানির সময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মন্তব্য করেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে জামিন জালিয়াতির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে কিছু অসাধু আইনজীবী জড়িত। এর হাত থেকে আদালতকে রক্ষা করতে হবে।’ আমরা চাই, জামিন জালিয়াত চক্রের বিষয়ে আদালতকে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি দাগি সন্ত্রাসীরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে সহজে জামিনে বের হতে না পারে- এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। একই সঙ্গে জামিনে মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নিবিড় নজরদারিতে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App