×

সারাদেশ

শিকলে বেঁধে শিশু নির্যাতন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৫৯ এএম

শিকলে বেঁধে শিশু নির্যাতন

শিকলে বেঁধে নির্যাতন।

বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বালক শাখায় দুই শিশুকে শিকলে বেঁধে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের শিশুদের দিয়ে ভারী কাজ করানোরও অভিযোগ উঠেছে।

শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও ও লাকড়ি বহনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বালক শাখার দুই শিশুর পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রকল্প উপপরিচালক বাসুদেব দেবনাথ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্রমতে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ওই কেন্দ্রের বালক ও বালিকা শাখায় ১৫৪ জন ছিন্নমূল শিশু রয়েছে। এর মধ্যে বালক শাখায় ৭২ জন ও বালিকা শাখায় ৮২ জন। তাদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। পুনর্বাসন কেন্দ্রের কয়েকজন শিশু জানায়, এখানে আমাদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করানো হয়। স্যারদের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) জামা-কাপড় ধুয়ে দিতে হয়। জুতা পরিষ্কার করতে হয়, হাত-পা ও মাথা ম্যাসাজ করতে হয়। এসব না করলে খাবার দেয়া হয় না। কোনো কোনো সময় স্যাররা রাগ করলে আমাদের মারধর এবং শিকল দিয়ে বেঁধে শাস্তি দিয়ে থাকেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঝালকাঠির একটি আদালত দুজন শিশুকে শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। জিসান ও হযরত নামে ওই দুই শিশু কেন্দ্রে আসার কয়েক দিন পরই তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে গাছের সঙ্গে তালা মেরে রাখা হয়। যার একটি ভিডিও অতিসম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে। শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, হযরত নামের শিশুটি বর্তমানে কেন্দ্রে থাকলেও নির্যাতনের একপর্যায়ে জিসান নামের অপর শিশু পালিয়ে গেছে।

হযরত জানায়, জিসান কেন্দ্রের এক বড় ভাই মেহেদীর মারধরের ভয়ে পালিয়ে গেছে। আর ওই বড় ভাইই স্যারের নির্দেশে তাদের দুজনকে শিকল দিয়ে বেশ কয়েক দিন বেঁধে রেখেছিল। আর স্যারের নির্দেশের কথা বড় ভাই মেহেদীই তাদের বলেছিল।

সূত্রমতে, মেহেদী নামের ওই নিবাসী এক কর্মকর্তার কাছ থেকে আলাদাভাবে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করে প্রায়ই কেন্দ্রের শিশুদের মারধর করত। তবে মেহেদী জানায়, সে কাউকে মারধর করে না, তবে তার দরজায় রাতের বেলা লাথি মারায় সে জিসান ও হযরতকে কেন্দ্রের খেলার মাঠের পাশেই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল। আর সেই শিকল সে কেন্দ্রের ভেতরেই পেয়েছে।

শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রকল্প উপপরিচালক বাসুদেব দেবনাথ বলেন, কেন্দ্রে আমিসহ ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছি। এর মধ্যে কেউ যদি শিশুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। নির্যাতনের মুখে শিশু পালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বাসুদেব দেবনাথ বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিশুটি অনেক চঞ্চল। তাকে এখানে পাঠানোর পর থেকে সে পালানোর চেষ্টা করছিল। নির্যাতনের কারণে সে পালিয়েছে এমন তথ্য সঠিক নয়। একটি মহল প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ ধরনের খবর ছড়াচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও এমন কেউ থাকতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, যেখানে শিশুদের সুরক্ষা ও যত্নের জন্য পাঠানো হয় সেখানে নির্যাতনের ঘটনা অমানবিক। তিনি আরো বলেন, শিশু নির্যাতনের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তদন্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার বলেন, শিশুদের শিকলে বেঁধে রাখাসহ বিভিন্ন মৌখিক অভিযোগের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন পেলে প্রকল্প পরিচালকের কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।

সূত্রমতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত প্রকল্প অনুসারে ২০১২ সালে রূপাতলী মওলানা ভাসানী সড়কে স্থাপন করা হয় শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের বালক শাখা। তার ঠিক দুই বছর পর ২০১৪ সালে স্থাপন করা হয় ওই কেন্দ্রের বালিকা শাখা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App