×

জাতীয়

বিমানবন্দরে কড়াকড়ি স্থলবন্দরে ঢিলেঢালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:২৮ এএম

বিমানবন্দরে কড়াকড়ি স্থলবন্দরে ঢিলেঢালা

করোনাভাইরাস

চীনফরত যাত্রী এবং করোনা ভাইরাস এই দুটিই এখন বিশ্ববাসীর কাছে আতঙ্ক। দেশের বিমানবন্দরগুলোর পাশাপাশি ইতোমধ্যে স্থলবন্দরগুলোতেও সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা এখনো সব জায়গায় কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া ঢাকায় কড়াকড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে কেউ কেউ রুট পরিবর্তন করে অন্য বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়েও দেশে আসছেন।

জানা যায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিবর্তে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে বেশ কজন চীনা নাগরিক দেশে ঢুকেছেন। গত শুক্রবারও এক চীনা নাগরিক দুবাই হয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। ওই একইদিন হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত হয়ে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন আবু রায়হান (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী।

ইতোমধ্যে সরকার চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করেছে। এ দেশে প্রবেশে চীনা নাগরিকদের সহজ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পহেলা জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। স্থলবন্দরগুলোতে দুই স্তরের নিরাপত্তা রাখারও নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার থেকে চীনফেরত যাত্রীদের অঙ্গীকারনামা সংগ্রহের নতুন নিয়ম চালু করেছে সরকার। নতুন এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চীনফেরত যাত্রীদের স্বেচ্ছায় দুই সপ্তাহ বাসায় অবস্থানের বিষয়ে অঙ্গীকারনামা নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অঙ্গীকারনামায় ওই ব্যক্তি নিজে থেকেই দুই সপ্তাহ বাসা থেকে বের হবেন না এই মর্মে স্বাক্ষর করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তার গতিবিধি নজরদারি করা হবে। অঙ্গীকারনামা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর আগে চীনফরত যাত্রীদের কাছ থেকে নাম ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হতো।

বাংলাদেশে প্রতিদিনই চীন থেকে ফিরছেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা কাজে অনেক চীনা নাগরিক জড়িত। দফায় দফায় তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রাখা হয়েছে কোয়ারান্টাইন অবস্থায়। পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ছয় হাজার কর্মীর মধ্যে দুই হাজার ৭০০ জনই চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলী। তাদের কারো মধ্যেই এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি চীন থেকে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরা ২০ জন চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ মনি জিকো। পিরোজপুরের কচা নদীর উপরে বেকুটিয়ায় ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজে ৫৭ জন চীনের নাগরিক বিভিন্ন পদে কাজ করছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এদেরও নজরদারিতে রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

তবে সরকারের নির্দেশের পরও দিনাজপুরের হিলি ও যশোর বেনাপোল বন্দরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ এই পথ দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করছে পাসপোর্টধারী অসংখ্য যাত্রীসহ ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও খালাসিরা।

হিলি প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মেডিকেল টিম গঠনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হিলি বন্দরে নেই থার্মাল স্ক্যানার ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা। একজন স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে চলছে এ কার্যক্রম। বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, এই স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও তা নষ্ট। হ্যান্ড থার্মাল মেশিন দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই ভারতীয় ট্রাক চালকদের। এ কথা স্বীকার করে বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, ভারতীয় ট্রাক চালকদের বাংলাদেশে প্রবেশের আগে যাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দেয়া হবে।

হাঁচি-কাশির মাধ্যেমে মানুষ থেকে মানুষে করোনা ভাইরাস ছড়ায় এই তথ্যে আতঙ্কিত হয়ে গণহারে মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। ব্যবহার বাড়ায় মাস্কের বিক্রি ও দাম দুইই বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মাস্কের প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশে নেই। কেননা, আমাদের দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।

মাস্ক ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, মাস্ক পরে অর্থ অপচয় করার কোনো দরকার নেই। একমাত্র আক্রান্ত হলেই মাস্ক পরতে হবে।

করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে আবারো মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে আশকোনা কোয়ান্টাইন কেন্দ্র থেকে মাথাব্যথা নিয়ে একজন উহানফেরত যাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি জ্বর নিয়ে ইতোপূর্বে ভর্তি হওয়া আরো একজনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। আশকোনা হাজি ক্যাম্পে অবস্থানরত সবাই সুস্থ আছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা ক্যাম্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আশকোনা হাজি ক্যাম্পে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত খাবার ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত চীনফেরত ৬ হাজার ৭৮৯ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আইইডিসিআরের কন্ট্রোল রুমে এ পর্যন্ত ৮২১ জন ফোন করেছেন। গতকাল ফোন করেছেন ২৯০ জন। হটলাইনে এ পর্যন্ত ৫৫৬ জন এবং গতকাল ২৬৬ জন ফোন করেছেন। এ পর্যন্ত ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারো নমুনায় করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App