×

রাজনীতি

কাঠগড়ায় মহানগর নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৩৮ এএম

সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পরে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে দলের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে- নির্বাচনে মহানগর বিএনপির নেতারা দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে মহানগর বিএনপির উত্তর ও দক্ষিণ দুই কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন। নতুন কমিটির মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন করতে হবে। দলটির হাইকমান্ডও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি ভাবছে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের পরে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ইশরাক হোসেন। নির্বাচনী ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা হলেও তাবিথ ও ইশরাকের নির্বাচনী মহড়ায় খুশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা। অনেকেই বলছেন, জয়-পরাজয় যাই হোক, এবারের নির্বাচনে বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন দল ঢাকার দুই মহানগরে দুটি শক্ত হাত পেয়েছে। যারা জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। যাদের দিয়েই বহুদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা ঢাকা মহানগর বিএনপি পেতে পারে নতুন প্রাণ।

সূত্র আরো জানায়, মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে (সাধারণ সম্পাদক) এরই মধ্যে দলের তরুণ দুই মেয়র প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, দক্ষিণে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনই এখন যোগ্য নেতা। তার সঙ্গে মহানগরের পরীক্ষিত ও ত্যাগী কোনো নেতাকে সভাপতি করলে সাংগঠনিকভাবে সফল হবে বিএনপি।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচনে প্রতিপক্ষের ধাক্কা ছিল এটা যেমন সত্য, তবে তা মোকাবিলা করার যে প্ল্যান ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি মহানগর নেতাদের গাছাড়া ভাবের কারণে। যদিও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের অবস্থান নেয়া ও ডিজিটাল কারচুপি ছিল, তবে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা যদি শক্ত থাকত এবং নেতারা ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে জয়লাভ করতে না পারলেও অন্তত জনসমক্ষে বিএনপির শক্তিশালী ভূমিকা স্পষ্ট হতো।

তারা বলেন, এক অর্থে তাবিথ-ইশরাকের সঙ্গে অবিচার করা হলো। এর বিচার হওয়া উচিত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, টাকার বিনিময়ে পদ বাণিজ্য করলে তার ফল তো ভোগ করতেই হবে।

সূত্র জানায়, ভোটের পরের দিন সকালেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে ফোন করে দুই সিটির নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ফল বিপর্যয়ের তদন্ত রিপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে দিতে বলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাই দুয়েক দিনের মধ্যেই দুই সিটির মহানগরের সভাপতি, সেক্রেটারি এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের ডাকা হবে গুলশান কার্যালয়ে। ভোটের দিনে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট না থাকার কারণ, কেন্দ্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের অনুপস্থিতিসহ নানা বিষয়ে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটের আগে দুই মহানগরের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নিজেদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। কথা ছিল যেকোনো মূল্যে ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ, পোলিং এজেন্টদের নিয়ে আসা এবং ভোটের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিংয়ে থাকবে বিএনপি। কিন্তু এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়নি।

ভোটের দিন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ইশরাক হোসেন। এ বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচনে আমার দুটো হাত ছিল- একটি মিডিয়া, অন্যটি দলীয় এজেন্ট। মিডিয়া আমার সঙ্গে বেইমানি করেনি কিন্তু এজেন্টরা বেইমানি করল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রস্তুতি পর্যাপ্ত ছিল কিন্তু সময়মতো সেটা কাজে লাগাতে পারেনি বিএনপি। ভোটের দিন কেন্দ্রে এজেন্ট এবং ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য যাদের ঠিক করা হয়েছিল তাদের অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে প্রতিপক্ষের বাধা যেমন ছিল, তেমনই মহানগর নেতাদের দায়িত্বহীনতাও ছিল।

নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করেন বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দুই আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তারা বলেন, কেন্দ্রে এজেন্ট না যাওয়াটা হতাশার। আমাদের প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়নি। এর কারণ অবশ্যই বের করা হবে।

এদিকে, নির্বাচনের পরে হরতাল এরপরে থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েও মাঠে ছিল না বিএনপি। বিষয়টিকেও ভালোভাবে দেখছেন না বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। এ বিষয়ে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, মামলা-হামলায় নেতাকর্মীরা সব কারাগারে, যার ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম এগোতে পারছে না। এরপরও অনেক হুমকি উপেক্ষা করে আমরা যতটা সম্ভব মাঠে থাকার চেষ্টা করেছি।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, আমাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা ছিল না। কারণ নির্বাচনী প্রচারসহ সব কাজে প্রতিপক্ষের তুলনায় এগিয়ে ছিলাম। যেকোনো ব্যর্থতায় মহানগরী কমিটির ওপর দায় চাপানো একটা ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App