×

সাহিত্য

বই মেলায় বাণিজ্য মেলার প্রভাব

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৩ পিএম

বই মেলায় বাণিজ্য মেলার প্রভাব

ইউনিভার্সিটি প্রেসের স্টলে বই দেখছেন দুই পাঠক

মেলার তৃতীয় দিনে মানুষের আনাগোনা থাকলেও বইয়ের বিকিকিনি তেমন একটা ছিল না। অনেক স্টলে বিক্রয় কর্মীরা অনেকটা অলস সময় কাটিয়েছেন। তবে সবাই আশা করছেন আগামী শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থেকে মেলার আসল চেহারায় ফিরে আসবে। প্রকাশকদের কেউ কেউ মনে করছেন এখনও বাণিজ্য মেলার প্রভাব চলমান থাকার কারণে বইমেলায় এই ঢিলেঢালা ভাব। আশার কথা পাঠক আসছেন এবং তা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে। মঙ্গলবার মেলার দুই প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি ঘুরে দেখা যায়, বিকেল ৩টায় মেলা শুরুর সময় থেকে কয়েক ঘন্টা তেমন একটা পাঠকের আনাগোনা ছিলনা। তবে সন্ধ্যার পর মেলায় অনেক মানুষ এসেছেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বই কিনেছেন। অনেককে আবার দেখা গেছে প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে ঘুরে নতুন বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করছেন। বনশ্রী থেকে থেকে আসা শিক্ষক চন্দনা হোসেন বলেন, এ বছর মেলাকে বেশ নান্দনিক মনে হচ্ছে। এর পরিসর বিস্তৃত হলেও ঘুরে ঘুরে বই দেখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মেলা তো এমনই হওয়া উচিৎ। তবে একটি বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের পর মেলার কোথায় কি স্টল বা প্যাভিলিয়ন রয়েছে তার জন্য কোনো দিক নির্দেশনা থাকলে খুব ভালো হয়। আমাদের মতো অনেক দূর থেকে আসা মানুষদের ভোগান্তি কম হয়। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, মেলা জমে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে গতবার এই সময়টাতেই মেলা বেশ জমে উঠেছিল। আমরা আশা করছি ছুটির দিনেই জমে উঠবে মেলা।চাকরিজীবী আর শিক্ষার্থীরাই তো মেলার প্রাণ। মেলামঞ্চের আয়োজন : মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি আঙিনায় বইমেলার মূলমঞ্চে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন’ বইবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান ও সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। সভাপতিত্ব করেন কবিকামাল চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঐতিহাসিক পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর ‘প্রথম বিপ্লব’ অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি, ‘বাংলাদেশ বিপ্লব’ হিসেবে সর্বদাই বিবেচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি অনুগত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ বিশ্বাসী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় দল গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর এ উদ্যোগ রাজনৈতিক বিপ্লবের দ্বিতীয় ধরন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্যই তৎকালীন বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্মসূচির সার-সংক্ষেপের কারণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থটি ব্যাপক প্রচার ও পাঠ কাম্য। গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ বিষয়ক অনেক গ্রন্থ লেখা হলেও তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে গবেষণাধর্মী ও বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ নেই। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের গুরুত্বকে তুলে ধরাই এই গ্রন্থের মূল প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শকে বুঝতে হলে দ্বিতীয় বিপ্লবের পটভূমি ও এর দার্শনিক রূপ উপলব্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচকবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থে তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ও প্রেক্ষাপট বস্তুনিষ্ঠভাবে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি তাঁর সারা জীবনের রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ থেকে উৎসারিত যার মূলে ছিল সাম্য ও সাধারণ মানুষের মুক্তির চিন্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সকল কর্মসূচিই মূলত ধাবিত হয়েছে দ্বিতীয় বিপ্লবের দিকে যার একুশ শতকীয় রূপ আমরা দেখতে পাই ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ধারণার মধ্যে। আমাদের কাজ হবে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে সামনে নিয়ে আসা এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সাম্যের আদর্শনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন তুলে ধরার যে দায়িত্ব আমাদের রয়েছে তা কেবল আবেগ দিয়েই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনের পর্যালোচনা। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন এ জাতীয় গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এদিন কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী রোজী, কবি সানাউল হক খান, দিলারা হাফিজ ও কবি আসাদ মান্নান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, গোলাম সারোয়ার, ঝর্ণা সরকার। সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিলি ইসলাম, সারোয়ার হোসেন বাবু ও জয়ন্ত আচার্য। মঙ্গলবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আর্লোচনা করেন কথাশিল্পী হাবিব আনিসুর রহমান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, লেখক অঞ্জন আচার্য এবং শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব। কালকের মেলা : কাল বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অজয় দাশগুপ্ত রচিত বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল শীর্ষক আলোচনা । প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন ও আবু সাঈদ খান। সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নতুন বই একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৮১টি। এর মধ্যে রয়েছে পাঞ্জেরী থেকে আলম তালুকদারের ‘রূপকথার আজবকথা’, মারুফ রসূলের ‘কাক্সিক্ষত খসড়া’, বাংলা একাডেমি থেকে হারুন-অর-রশিদের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কি ও কেন’, আগামী থেকে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর গান্ধীর দর্শন ও শেখ মুজিবের রাজনীতি, রফিকুল ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র’, অবসর থেকে ইমরান কায়েসের ‘জন্মান্তর’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মোশতাক আহমেদের ‘লাল ডায়েরি’, অন্যপ্রকাশ থেকে সাদাত হোসাইনের ‘মেঘের দিন’, একই লেখকের ‘মরণোত্তম’, সুমন্ত আসলামের ‘যদি কখনো’, অনন্যা থেকে শামসুর রাহমানের ‘উপন্যাস সমগ্র’ অন্যতম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App