×

শিক্ষা

তিন বিতর্কিত ব্যক্তির ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাহারের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:২০ পিএম

তিন বিতর্কিত ব্যক্তির ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাহারের দাবি
খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা ও আইয়ুব খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে বারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে 'বিতর্কিত ব্যক্তিদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রত্যাহার আন্দোলন পরিষদ'। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ আনসারী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিটি সমাবর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয় এক অথবা একাধিক ব্যক্তিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে এসেছে। যাদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে, ধরেই নিতে হবে যে, তারা রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু ডিগ্রিপ্রাপ্তদের কারও কারও এ সম্মানপ্রাপ্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমনই তিনজন হলেন- খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা এবং আইয়ুব খান। খাজা নাজিমুদ্দিন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ আনসারী বলেন, ভাষা আন্দোলনের '৪৮ এবং '৫২-র দুই পর্বেই তার ভূমিকা ছিল বাংলাবিরোধী ও বাঙালীবিরোধী। ঢাকায় জন্ম হওয়া সত্ত্বেও এই বঙ্গসন্তান বাংলা বলতে পারতেন না। তার পারিবারিক ভাষা ছিল উর্দু। হয়তোবা এ জন্যই তিনি কখনোই বাংলাকে বুকে ধারণও করতে পারেননি। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় তিনি ঘোষণা দেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বাংলা হরফে উর্দু লেখা সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। ইস্কান্দার মির্জা সম্পর্কে তিনি বলেন, ইস্কান্দার মির্জা তার গভর্নর জেনারেলশিপের সময়ে বহু প্রতীক্ষিত সংবিধান প্রবর্তিত হলেও তিনি এমনই এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই চাননি যে, সংবিধান কার্যকর থাকুক। তার আচরণ ছিল অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী এবং স্বার্থানুকূল। তারই পরিণতিতে সংবিধান বলবৎ হওয়া মাত্র আড়াই বছরের মাথায় '৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তিনি সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের সামরিক শাসনের সূচনাকারী ইস্কান্দার মির্জা কুখ্যাত হিসেবে ইতিহাসে চির অক্ষয় হয়ে থাকবেন। আইয়ুবের ঘৃণ্য কর্ম-খতিয়ানকে দীর্ঘ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তার কয়েকটি কুকর্মের উল্লেখ করছি- ১. তিনিই প্রথম বিডি মেম্বারদের মাধ্যমে হ্যাঁ-না পদ্ধতির প্রয়োগে অপর কোনো রাষ্ট্রপতি পদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ব্যালটে সিল মারারও সেখানে কোনো বিধান ছিল না; ২. তারই কারণে অন্য কোনো দলবিহীন পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলিম লীগ একক দল হিসেবে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়; ৩. তার আমলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও হয়রানি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়ে পড়ে; ৪. নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে তিনি একটি উদ্ভট সংবিধান, যা 'আইয়ুবের সংবিধান' নামে পরিচিত, প্রবর্তন করেন। এ সংবিধানের মাধ্যমে সব ক্ষমতা তিনি তার হাতে কুক্ষিগত করেন; ৫. ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনিই প্রথম 'এনএসএফ' নামের পেটোয়া বাহিনী তৈরি করেন; ৬. ছাত্রদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ১৯৬২ সালের শরীফ শিক্ষা কমিশন সুপারিশ তারই ইন্ধনে প্রবর্তিত হয়। এর বিরোধিতার পরিণতিতেই প্রতি বছর উদযাপিত হয় ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস হিসেবে; ৭. আইয়ুব খানের একান্ত বশংবদ মোনায়েম খান এবং ড. ওসমান গনি যথাক্রমে গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। এই দু'জনের নিয়োগের ফলে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর চরম দমন-পীড়ন শুরু হয়; ৮. আইয়ুবের দাম্ভিকতার পরিণতিতে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং পরাজিত হয়। যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে; দ্রব্যমূল্যে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থার সৃষ্টি হয়; ৯. প্রতিহিংসা চরিতার্থকল্পে ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বঙ্গবন্ধুসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেন। ড. আনসারী আরও বলেন, যে সালে নাজিমুদ্দিনকে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছিল, সেই '৪৯ সালেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে। সেই মতিনকেই আবার বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ সালে সমাবর্তন বক্তার এবং ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের সম্মান দেয়। মতিন ও নাজিমুদ্দিনের নাম কি একই তালিকায় মানায়? বঙ্গবন্ধুর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে পারলে বিতর্কিত এই তিনজনের ডিগ্রি কেন প্রত্যাহার করা যাবে না, এই প্রশ্নও রাখেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App