×

আন্তর্জাতিক

করোনায় বিপর্যস্ত চীন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২৭

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০১ এএম

করোনায় বিপর্যস্ত চীন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২৭

মহা বিপর্যয়ের কাল চলছে এখন চীনের। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আক্রমণ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে দেশটি। আণুবীক্ষণিক এ শত্রু র মোকাবিলায় সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু থামছে না বিপর্যয়। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। উহান প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস চীনের মূল ভূখণ্ড ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের ৬টি মহাদেশে। দেশের মধ্যেও প্রায় দুই ডজন শহর কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। শহর থেকে দূরের কথা, নিতান্ত বাধ্য না হলে ঘর থেকেই বাইরে বের হচ্ছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৫ জন । এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২০৫ জনে। আর নতুন ৬৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৪২৭ জনে।যার মধ্যে হংকং ও ফিলিপাইনে ১ জন করে মোট ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনা ভাইরাস মূলত নানা কাজে বিভিন্ন দেশে যাওয়া চীনাদের মাধ্যমেই পৌঁছে গেছে সেসব দেশে। সেখানেও নতুন নতুন লোক আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে। স্বাভাবিকভাবেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নিজ নিজ নাগরিকদের চীন ভ্রমণে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে বিভিন্ন দেশ। বিশেষ তৎপরতায় চীনে থাকা কূটনীতিকসহ নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়েও নিয়েছে কয়েকটি দেশের সরকার। সীমান্ত সিল করে দিয়েছে রাশিয়া। চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে হংকংয়ের চিকিৎসা কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘সীমান্ত বন্ধ করো, প্রাদুর্ভাব ঠেকাও! হংকংয়ের ৯০ শতাংশ খাদ্যই বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। এর সিংহভাগ আসে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে থাকা নগরীটির বাসিন্দারা এরই মধ্যে মাংস, চাল ও ক্লিনিং পণ্য কিনে সুপারমার্কেটগুলো খালি করে ফেলেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

চীনাদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা বাতিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। বাতিল হয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ বিমান কোম্পানিগুলোর চীনমুখী ফ্লাইট। গুগল, আইকিয়াসহ শীর্ষ চেইন স্টোরগুলো চীনের সঙ্গে তাদের সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। একপ্রকার থমকে গেছে সেদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে ধস নেমে এসেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের পুঁজিবাজারে।

লোক চলাচল সীমিত রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে নববর্ষের ছুটি ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছিল চীন। সেই ছুটি শেষে গতকাল সোমবার প্রথম কর্মদিবসেই বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে দেশটির পুঁজিবাজার। রয়টার্স জানায়, সাংহাই কম্পোজিট সূচক পড়ে গেছে আট শতাংশ। এক ধাক্কায় বাজার মূলধন কমে গেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রাবাজারের লেনদেনে চীনের উহান এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে লোহা, তেল ও তামার দাম পড়ে গেছে। অর্থনীতির আতঙ্ক প্রশমনে তারল্য বাড়াতে চীনের ১২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, বা ১৭৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে পানির মতো টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাদের, অন্যদিকে বাকী বিশ্ব বাণিজ্যিক যোগযোগ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখায় অর্থনীতির জন্যও তৈরি হচ্ছে অশনি সংকেত। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকেও যেতে হবে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে।

প্রথম দিকে চীনের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হতে হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও (ডবলিউএইচও)। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় তাদের জারি করতে হয়েছে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা। সিএনএন জানিয়েছে, চীনের বাইরে অন্তত ২৫ দেশ ও অঞ্চলে দেড়শ মানুষের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৫০ জন ছাড়িয়েছে ইতোমধ্যেই।

এদিকে, চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশের উহানে মাত্র ১০ দিনে তৈরি করা হাজার শয্যার হাসপাতালটি চালু হয়েছে গতকাল। অনন্য সাফল্য দেখিয়ে গত রবিবার হুওশেনশান বা, অগ্নিদেবতা পর্বত নামের হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয় গতকাল থেকে। চীনের সশস্ত্র বাহিনীর এক হাজার ৪০০ চিকিৎসা কর্মী হাসপাতালটিতে কাজ করবে। হাসপাতাল চালু হওয়ার আগেই তাদের উহানে পাঠানো হয়েছিল। এদের মধ্যে ৯৫০ জন চীনের গণমুক্তি ফৌজের (পিএলএ) জয়েন্ট লজিস্টিক সার্পোট ফোর্সের বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বাকি ৪৫০ জনকে পিএলএর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নিয়ে আসা হয়।

এ ধরনের একটি প্রকল্পের জন্য এমনিতে গড়ে দুই বছর সময় লাগে। এক মাসে অস্থায়ী একটি ভবন বানানো যায়, কিন্তু সংক্রামক একটি রোগের জন্য নতুন হাসপাতাল বাননো এক রকম অসম্ভবই ছিল। উহানের দক্ষিণপশ্চিম প্রান্তে ঝিয়িন হ্রদের কাছে একটি স্বাস্থ্যনিবাসে হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের নকশা করতে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নকশার ড্রাফট তৈরি করে। চীনের তিনটি নির্মাণ কোম্পানি যৌথভাবে হাসপাতালটি তৈরি করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App