×

সারাদেশ

কৃষিজমি কেটে মাছচাষ, হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:১১ পিএম

কৃষিজমি কেটে মাছচাষ, হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

এভাবেই কৃষিজমি কেটে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছে একটি শ্রেণি। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ছবিটি ডামুড্যা উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে তোলা।- প্রতিনিধি।

কৃষিজমি কেটে মাছচাষ, হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

এভাবেই কৃষিজমি কেটে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছে একটি শ্রেণি। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ছবিটি ডামুড্যা উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে তোলা।- প্রতিনিধি।

কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা থাকলেও কেউই তা মানছেন না। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে বোরো চাষের জমি কেটে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে মাছের ঘের। ঘের ব্যবসায়ীরা লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে কৃষিজমি লিজ নিয়ে অবাধে তৈরি করছে মাছের ঘের। এতে দিন দিন আশংকাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। হুমকিতে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা।

দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা শরীয়তপুরে ফসলি জমি কেটে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে মাছের ঘের। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে ঘের তৈরি বন্ধ করলেও তা কাজে আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক উপজেলায় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে কৃষকরা জানায়, দীর্ঘ সময়ের জন্য কৃষি জমি লিজ নিয়ে ৭/৮ ফুট গভীর করে বাঁধ দিয়ে ঘের তৈরি করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে ঘের দস্যুরা। রাত-দিন বিরতিহীন ভাবে চলছে ঘের তৈরির কাজ। স্থানীয় প্রশাসন কোনোভাবে থামাতে পারছে না তাদের।

মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে কর্মকর্তারা গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসেন। তবে দুএকদিন পরে ফের দ্বিগুন উৎসাহে চলে ঘের তৈরির। অদৃশ্য কারণে প্রশাসন সে খবর আর রাখে না। কোনো কোনো উপজেলায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঘের তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঘের দস্যুবাহিনী গড়ে উঠেছে। এরা কৃষকদের লোভনীয় অফার দিয়ে বিভিন্ন ইরি বোরো ব্লকে কিছু জমি লিজ নিয়ে ঘের কাটা শুরু করে। এরপর ঘেরে জমি লিজ দিতে বাকি কৃষদের নানা ভাবে বাধ্য করা হয়। দেখা যায় অন্য কৃষকরা জলাবদ্ধতা, চাষাবাদে সমস্যা, ফসল করার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ঘেরে জমি দিতে বাধ্য হয়।

আর এতে এক শ্রেণির ঘের ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তাতে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে কৃষি জমি। হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা। বেকার হয়ে পড়ছে কৃষি নির্ভর শ্রমজীবীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে দিনদিন আরো দ্বিগুণ হচ্ছে ঘের তৈরির প্রবণতা।

জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শ্রেণি ভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো চাষাবাস হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পাণ্যের নায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রতি হেক্টর জমি ১০/১২ হাজার টাকায় ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নিচ্ছে ঘের ব্যবসায়ীরা। ভূমি আইনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে অবাদে চলছে ঘের খনন। তবে নড়িয়া ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও শরীয়তপুর সদর উপজেলাতে ঘের খননের প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।

[caption id="attachment_200089" align="aligncenter" width="700"] এভাবেই কৃষিজমি কেটে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছে একটি শ্রেণি। - প্রতিনিধি।[/caption]

নড়িয়া উপজেলায় গত ২/৩ বছরে কৃষি জমিতে অন্তত শতাধিক ঘের খনন করেছে ঘের দস্যুরা। ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার, ছয়গাও, নারায়পুর, রামভদ্রপুর এলাকায় এ মৌসুমে অন্তত ৫০টি ঘের তৈরি হয়েছে। এখনো অন্তত ২০টি ঘের খননের কাজ চলমান রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও শরীয়তপুর সদর উপজেলাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন সোর্স থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘের খননের তথ্য দেয়া হলেও ঘের খনন বন্ধ করতে পেরেছে- এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চলানো হলেও প্রকৃত পক্ষে ঘের খননের কাজ থামাতে পারছেনা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগ সাজসে ঘের খননের অভিযোগও করছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এটিএন বাংলার স্থানীয় সাংবাদিক রোকনুজ্জামন পারভেজ বলেন, যেভাবে কৃষি জমিতে মাছ চাষ শুরু হয়েছে- খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য দেয়ার পরেও রহস্য জনক কারণে ঘের নির্মান থামাতে পারছে না প্রশাসন। নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করেই দায় সারছেন, কাজের কাজ কিছুই হয় না।

শরীয়তপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি শেখ খলিলুর রহমান বলেন, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও নড়িয়া উপজেলাতে কৃষি জমি কেটে মৎস্য ঘের তৈরির হিড়িক পড়েছে। কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না কৃষি জমি। স্থানীয় প্রশাসন আরো কঠোর না হলে হুমকিতে পড়বে কৃষি। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া প্রয়োজন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাসিভ বলেন, কৃষি জমি কেটে মৎস ঘের তৈরি করার অভিযোগে কয়েকজনকে জেলা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App