×

জাতীয়

বায়ুদূষণ রোধে সব পদক্ষেপই বিফলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৪৬ এএম

বায়ুদূষণ রোধে সব পদক্ষেপই বিফলে
আওয়ামী লীগ-বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী যখন বাংলাদেশের রাজধানীকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাসহ নাগরিকদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন তখনই বায়ুদূষণের শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা। দূষণের দিক থেকে এরই মধ্যে দিল্লি, লাহোর, মঙ্গোলিয়াসহ বড় বড় শহরকে টপকে গেছে ঢাকা। নির্মল বায়ুর জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও দূষণের লাল তালিকা থেকে এখনও বেরোতে পারছে না আমাদের ‘ঢাকা’। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়াল এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল ঢাকা। সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় দূষিত বায়ুর মানমাত্রা ছিল ৩৪৪। শুধু গতকালই নয়, গত কদিন ধরেই একটানা দূষিত বায়ুর তালিকায় ঢাকা বিশে^র শীর্ষে ছিল। ২৭ জানুয়ারি রাতে দূষিত বায়ুর মাত্রা চারশ ছাড়িয়েছিল। বায়ুদূষণের এ ঘটনা প্রথম নয়। এর আগে গত বছরজুড়েই দূষিত বায়ু বইছিল ঢাকায়। চলতি বছরের শুরুতেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এই দূষণের ফলে নাগরিকদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। এতদিন ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হতো শহরের আশপাশে গড়ে ওঠা ইটের ভাটাগুলোকে। সে জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের পাঁচ জেলায় ৬২ শতাংশের বেশি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এরপরও ঢাকা শহরের বায়ু মানের উন্নতি হয়নি, বরং দূষণের শীর্ষে উঠেছে। শুধু ইটভাটার ধোঁয়া নয়, ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণকাজের ধুলা ও যানবাহনের ধোঁয়াও দূষণে বহুলাংশে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু বায়ুদূষণ রোধে এগুলোকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। তবে রাজধানীর ভোটে মেয়র প্রার্থীরা তাদের ঘোষিত ইশতেহারে বায়ুদূষণ রোধ ও পরিবেশ উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সুন্দর ঢাকা গড়তে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্যান নির্মাণ, সবুজায়ন, ছাদবাগানে উৎসাহ, পরিবেশ স্থাপনা বাড়ানো, বায়ু ও শব্দদূষণ রোধ করাসহ শরীর ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও শরীরচর্চা কেন্দ্র করবেন। আর নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, রাজধানী ঢাকা থেকে ধুলাবালি দূর করার পাশাপাশি শব্দ ও বায়ুদূষণ প্রতিকারে ‘মিস্ট ব্লেয়ার’-এর ব্যবহার কার্যকর করা হবে। একই সঙ্গে বায়ু, শব্দ ও পরিবেশ দূষণমুক্ত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সোর্স কন্ট্রোল’ করা হবে। ঢাকা উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পরিবেশ দূষণে সরাসরি কিছু না বলে পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়বেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক্যাল বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যারা নির্বাচনে জয়লাভ করে নগর সাজাবেন তারা বায়ুদূষণ রোধে ঠিক জায়গার কাজ করার কথাই বলেননি। তারা যেসব কথা বলেছেন তাতে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করা যাবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, রাজধানীতে নিয়ম না মেনে উন্নয়নমূলক কাজ করায় ধুলাদূষণ বাড়ছে। আর এই ধুলাদূষণ থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ করেছে। এরপরও দূষণ না কমার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনো রাজধানীর আশপাশে যেসব ইটের ভাটা রয়েছে সেগুলোতে নিম্নমানের জ্বালানি পোড়ানো হচ্ছে। এতেও বায়ুদূষণ বাড়ছে। এ ছাড়া শিল্প-কারখানার বর্জ্য এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলেও রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়ছে। পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠনগুলো বলছে, ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ঢাকা ও এর আশপাশের ছোট-বড় শিল্প কারখানার চিমনি থেকে কালো ধোঁয়ার নির্গমন, ডিজেল চালিত এবং ১৫ বছরের পুরোনো গাড়ির ধোঁয়া, নানা ধরনের রাসায়নিক সঠিক পদ্ধতিতে শোধন না করে পরিবেশে ছাড়ার ফলে মারাত্মক দূষণ করে যাচ্ছে, নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট দূষণ, বস্তি, হোটেল ও দোকানে কয়লা ও কাঠ এবং যেখানে সেখানে টায়ার জাতীয় জঞ্জাল পোড়ানোর ফলে দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মতে, পুরোনো গাড়ি এবং অন্য উৎস থেকে ভাসমান ধূলিকণা এবং নাইট্রোজেন সালফার যৌগ বাতাসে ছড়ায়। এ ছাড়াও ঢাকায় বড় জলাশয় বলতে নেই। এর ফলে ভাসমান ধূলিকণা যা পানির ওপরে পড়ে থিতিয়ে যেতে পারছে না। চিকিৎসকরা বলেছেন, বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, সর্দি-কাশি, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ, ব্রঙ্কাইটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন মানুষ। মূলত শীতকালেই দূষণের প্রভাব বেশি হয়। বাড়ে শ্বাসজনিত অ্যালার্জি। পরিবেশ আন্দোলনের মতে, দূষণ প্রতিরোধে শহরে মালবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমাতে হবে। যেখানে-সেখানে জঞ্জাল পোড়ানো যাবে না। নিয়মিতভাবে রাস্তায় ও কারখানার আশপাশে সবুজায়ন করতে হবে। রাস্তা তৈরির সময় প্রকাশ্যে পিচ পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। বাড়ি তৈরির সময় পরিবেশবিধি মানতে হবে। নিয়ম মেনে নির্মাণকাজ করতে হবে। প্রতিটি যানবাহনকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার পরই দূষণের ছাড়পত্র দিতে হবে। পুরোনো গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাতিল করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App