×

মুক্তচিন্তা

সমাজে অনেক রানা রয়েছে, খোঁজ করুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৪৪ পিএম

সমাজে অনেক রানা রয়েছে, খোঁজ করুন

সম্প্রতি র‌্যাপ গান গেয়ে ভাইরাল হওয়া ঢাকাইয়া গাল্লি বয় রানাকে আজ চিনে না এমন মানুষ আমাদের সমাজে খুব কমসংখ্যক রয়েছে। তার গাওয়া ‘আমি গল্লির পোলা, আমার নাম হইলো রানা, শহরের অলিগলির গল্প আমার জানা’ গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। তার র‌্যাপ গানের মাধ্যমে বর্তমান সমাজের করুণ পরিস্থিতির চিত্র খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছে, যার জন্য সংবাদপত্র থেকে শুরু করে ইউটিউব ও ফেসবুকে তাকে নিয়ে আলোচনার জড় উঠে যায়। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আলোচনা হওয়ার কারণে সংবাদকর্মীরা তার পিছু লেগে যায়, তারা জানতে চায় গাল্লি বয় রানার স্বপ্ন কী এবং সে কী হতে চায়? উত্তরে গাল্লি বয় রানা কখনো বলে চিকিৎসক হতে চায় আবার কখনো বলে সেনা সদস্য হতে চায়। তবে সে গানটাও চালিয়ে যেতে চায়। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় মিডিয়ার সামনে প্রকাশিত কথাগুলো।

গাল্লি বয় রানার প্রথম কনসার্টে তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, গাল্লি বয় রানার সব পড়ালেখার খরচ জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আমরা বহন করছি। তাছাড়া তাওহীদ আফ্রিদিও বলেন গাল্লি বয় রানার লেখাপড়ার সব দায়িত্ব এখন আমার এবং ফেসবুকে অনেকেই স্ট্যাটাস দেয় আমরাও গাল্লি বয় রানার সব দায়িত্ব নিয়ে চাই। আমাদের দেশে যে রানাই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হয়, সে রানার পড়ালেখার সব খরচ সবাই বহন করতে চায়। কিছুদিন আগে জনপ্রিয় ‘মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটি গেয়ে জাহিদ নামের একটা ছেলেও ভাইরাল হয়েছিল; কিন্তু আজ তার কোনো খোঁজখবর নেই, সে কোথায় আছে অথবা কী খাচ্ছে? আমরা তা সঠিক বলতে জানি না। এক সময় জাহিদ হাসানের গান আমাদের মুখে অবিরত বাজতে থাকত; কিন্তু সে গান ও জাহিদ হাসান দুটিই এখন আমাদের মাঝে নেই।

আমাদের সমাজে যখন কোনো ব্যক্তি ভালো গান গায় কিংবা ভালো কাজ করে তখন এসব কার্যকলাপ আমাদের সামনে চলে আসে। তখনই আমরা সবাই তাকে সাহায্য করতে চাই এবং তার পাশে দাঁড়াতে চাই। একইভাবে গাল্লি বয় রানার দিকে তাকালে আমরা ঠিক তা দেখতে পাই। বর্তমানে আমরা যে ভাইরাল হওয়া গাল্লি বয় রানার গান বিভিন্ন কনসার্ট কিংবা ইউটিউবে উপভোগ করি, সেই রানা ফুটপাতেও কিন্তু ভালো গান গাইত, শুধু ছিল তাবিব মাহমুদ ভাইয়ের মতো মানুষের হাত ছোঁয়ার অপেক্ষার অভাব। আমাদের আশপাশে এক গাল্লি বয় রানার মতো হাজার হাজার গাল্লি বয় রানা সমাজে পড়ে রয়েছে। যাদের প্রতি একটু তাকালে সমাজ বদলে যেত এবং সমাজে শান্তি ফিরে আসত। পাশাপাশি আমাদের সমাজে অসংখ্য প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে রয়েছে। যারা লেখাপড়ায় অনেক ভালো কিন্তু টাকার অভাবে স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে না, শুধু রূপকথার গল্পের মতো রয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে অনেক ভালো ফুটবল খেলোয়াড় আমাদের মাঝে আছে। কিন্তু মামা, চাচা না থাকার কারণে কিংবা বড় অঙ্কের টাকা না দেয়ার কারণে তারা ভালো খেলেও দলে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

আমি পাঠকের উদ্দেশে বলতে চাই, ভাইরাল হওয়া এক রানার দায়িত্ব যদি চার-পাঁচজন মানুষ নিতে পারে, তাহলে সম্ভাবনাময়ী এক রানাকে খুঁজতে চার-পাঁচজন মানুষ কেন বের হতে পারি না? আমাদের সমাজে অনেক মেধাবী রানা পড়ে আছে, তাদের জন্য যদি আমাদের সহযোগিতার হাত বের করে দেই; তাহলে ফুটপাতের মেধাবী রানারা বসে থাকবে না। তারাও আমাদের মতো সুন্দর করে কথা বলতে পারবে, গান পরিবেশন করতে পারবে, লেখাপড়া করার সুযোগ করে নিতে পারবে এবং সমাজের অসামাজিক ও খারাপ কাজ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। আমাদের সমাজে যত অবৈধ কাজ সংঘটিত হয়, সব কাজ ফুটপাতের মধ্য দিয়ে আদান-প্রদান হয়। যেমন- ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা। এগুলো ফুটপাতের মধ্য দিয়ে আদান-প্রদান হওয়ার কারণ হলো- ফুটপাতের মানুষগুলো ভালোভাবে দুবেলা ভাত খেতে পারে না। আর দুবেলা ভাত খাওয়ার জন্য, ফুটপাতের মানুষগুলো অল্প টাকার বিনিময়ে অবৈধ জিনিস সমাজে বিস্তার করে।

পরিশেষে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যদি সরকারের পাশাপাশি ধনাঢ্য পরিবারের ব্যক্তির ফুটপাতের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল, মাদ্রাসা, সঙ্গীত এবং তাদের কাজে লাগানোর জন্য আলাদা প্লাটফর্মের ব্যবস্থা করি; তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি ফুটপাতের ছেলেমেয়েরাও আর পিছিয়ে থাকবে না। সুতরাং ভাইরাল হওয়া এক রানার জন্য পড়ে না থেকে, অন্য রানাদের খুঁজতে চেষ্টা করি; তাহলে দেশ হবে মাদকমুক্ত, বেকারমুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং পাশাপাশি দেশ হবে উন্নত।

  • শিক্ষার্থী, নবীগঞ্জ সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App