×

সম্পাদকীয়

শৃঙ্খলা আনা সরকারের দায়িত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:২০ পিএম

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গত মঙ্গলবার সকালে দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় প্রাণ হারিয়েছেন ওমর ফারুক তুহিন (২৮) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী। পুলিশ জানিয়েছে, একটি বাস ধাক্কা দিয়ে তুহিনের মোটরসাইকেল ফেলে দেয়ার পর অন্য বাসটি তাকে চাপা দেয়। এমন মর্মান্তিক ঘটনা এ শহরে নতুন নয়। বিশেষ করে রাজধানীতে বাস চলাচল বিপজ্জনক। গণপরিবহনে নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার চিত্র বারবার দেখছি আমরা। রাজধানীর কুর্মিটোলায় দুই বাসের প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে মারা যায়ন রমিজ উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম, অন্যজন আব্দুল করিম রাজীব।

এর আগে বাংলামটরে কৃষ্ণা রায়, কারওয়ানবাজারে রাজীব হোসেন, মহাখালীতে গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার, প্রাইভেটকারের চালক রাসেল এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রাজীব হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ৪৯ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। চালকদের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, চালকদের ৮১ শতাংশ প্রশিক্ষণ ছাড়া শুধু ওস্তাদদের কাছ থেকে শিখেই চালক বনে যান। এসব প্রশিক্ষণবিহীন চালক সঙ্গত কারণেই নিয়মনীতির ধার ধারেন না। এছাড়া চালকের অন্যমনস্কতা, গাফিলতি ও গোঁয়ার্তুমির কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাবে একের পর এক কোম্পানি সড়কে বাস নামাচ্ছে। অদক্ষ এমনকি নেশাগ্রস্তদের হাতে তুলে দিচ্ছে বাসের স্টিয়ারিং। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, বাস মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। তাদের টনক কি নড়বে না?

বেসরকারি পরিবহন খাত এমন আচরণ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যে, তাকে আইনের আওতায় পরিচালিত বাণিজ্যিক সেবা খাত বলে চিহ্নিত করা কঠিন। মালিক-চালকদের আচরণ মাফিয়ার মতো। বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল (বাস) গাড়ি চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহন মালিক তাদের বাস-মিনিবাস চালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছেন। চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সে-ই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে। এ কারণে একই রুটের বাসের মধ্যেই ভয়াবহ মরণ রেস দেখা যায়। আর এ প্রতিযোগিতার কারণেই পরিণতি হয় দুর্ঘটনা। সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এক কথায় ভয়াবহ। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। সড়কপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App