×

জাতীয়

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চান ভোটাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০১:৪৫ পিএম

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চান ভোটাররা

ফাইল ছবি

আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা পরেই ঢাকায় ভোট। ভোটকে কেন্দ্র করে বড় দুই দলের চার মেয়র প্রার্থীই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। চারজনই প্রায় অভিন্ন সুরে বলেছেন, নির্বাচিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকায় গণশৌচাগারের অভাব দূর করবেন। এতে কর্মী-সমর্থকরা আনন্দিত হলেও ভোটারা কতটুকু এই বক্তব্য আমলে নিয়েছেন তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে ভোটাররা বলেছেন, নির্বাচিত মেয়র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যদি নগরে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার নির্মাণ করে দিতে পারেন তবেই তাদের ভোট দেয়া সার্থক হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গণশৌচাগার রয়েছে মাত্র ২৫টি আর দক্ষিণে রয়েছে ৩৭টি। অথচ রাজধানী ঢাকায় কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষের বাস। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে শহরটিকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর উত্তর অংশের নাম হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ অংশের নামকরণ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এমন বড় মহানগরে নাগরিকদের জন্য গণশৌচাগার খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি এখনও অপ্রতুল। এর ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে।

গত বছরের মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের শহরের অনেক জায়গায় অনেক সুন্দর সুন্দর পাবলিক টয়লেট হয়েছে। এসব পাবলিক টয়লেট দেখলে মনে হয় ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। ফাইভ স্টার হোটেলের পাবলিক টয়লেটের সঙ্গে এগুলোর খুব একটা পার্থক্য নেই। পাবলিক টয়লেটগুলোর পরিবেশ সুন্দর, টিস্যু বক্স আছে, প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এসব টয়লেট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সবার। মেয়র বলেন, আমরা ৫৩টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছি, যার ১৮টির কাজ শেষ এবং নাগরিকরা ব্যবহার করছেন।

এসব স্থাপনা রক্ষার স্বার্থে এবং নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য আমাদের সবাইকে স্ব-উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে এই পাবলিক টয়লেটগুলো সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের এত সুন্দর সুন্দর পাবলিক টয়লেট আছে, কিন্তু অনেকেই জানেন না। এখন একটি মোবাইল অ্যাপ আছে। এটির মাধ্যমে অনেকেই এখন এ বিষয়ে জানছেন। তবে এটিকে আরো ছড়িয়ে দিতে হবে।

সেই আতিকুল ইসলাম ভোটের আগমুহূর্তে এসে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং ইশতেহারে বলেছেন, ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা : সুস্থ, সচল, আধুনিক ঢাকা’- গড়বেন। তিনি ঢাকাকে সিঙ্গাপুর, লন্ডন শহরের মতো পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, সুয়্যারেজসহ নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেছেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেছেন, নগরীতে গণশৌচাগারও বাড়ানোর হবে।

ভোটে জয় পেলে তিন মাসের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের গণশৌচাগারের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, তিন মাসের মধ্যে ডিএসসিসির প্রত্যেক ওয়ার্ডে জনবসতি অনুপাতে গণশৌচাগার স্থাপন করব। সেখানে নারীদের এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত। এখানে নাগরিক সুবিধা সীমিত। পুরনো ঢাকার সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও আছে তাপসের। বিশেষ করে যানজট, জলাবদ্ধতা আর মশার উৎপীড়ন থেকে নগরবাসীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকছে তাপসের নির্বাচনী ইশতেহারে। বিশেষ করে পুরনো ঢাকাকে উন্নত রূপ দেয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া থাকছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ঢাকাকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখাও। এরই মধ্যে ইশতেহার প্রণয়নের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেয়র নির্বাচিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে নাগরিকদের সব মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকছে তাপসের ইশতেহারে।

সিটি করপোরেশন গণশৌচাগার নির্মাণের পর তা ইজারাদারদের কাছে হস্তান্তর করে। তারাই মূলত এগুলো দেখভাল করে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তারা সাধারণ মানুষকে শৌচাগার সেবা দিয়ে থাকে। ঘরের বাইরে গেলে গণশৌচাগারের সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এর মূল ভুক্তভোগী নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি। শহরের যে কটি গণশৌচাগার রয়েছে সেগুলোও দুর্গন্ধে ভরা, ছিটকিনিও নষ্ট, অনেক সময়ই থাকে না ভেতরে পানির ব্যবস্থা। এসব নিয়ে শহরের বাসিন্দারের অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়।

ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি বেশ নাজুক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকায় গাড়ির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঢাকায় খুব ধীর গতিতে যানচলাচল করে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থাকতে হয়। কর্মজীবী যারা রয়েছেন তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু চলার পথে অনেকেই গণশৌচাগার পান না। পেলেও এসব ব্যবহারের উপযোগী নয়। ঘরের বাইরে গেলে শৌচাগারের সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে যারা জয়ী হবেন- তাদের প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী গণশৌচাগার সমস্যার সমাধান করবেন- এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App