×

সারাদেশ

পাতার দড়িতে ভাগ্য খুলেছে ২০ হাজার নারীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৫৬ পিএম

পাতার দড়িতে ভাগ্য খুলেছে ২০ হাজার নারীর

দড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত নারীরা

পাতার দড়িতে ভাগ্য খুলেছে ২০ হাজার নারীর
পাতার দড়িতে ভাগ্য খুলেছে ২০ হাজার নারীর

ভোলার প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছেন দড়ি। সেই দড়ি বিক্রি হচ্ছে ঢাকার পাইকারি বাজারে। এই দড়ি দিয়ে শো-পিস ও আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে চীন, জাপান, কানাডাসহ ৭৪টি দেশে। দড়ি বুনে অনেক নারী ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। তারা সংসারে দিচ্ছেন অর্থের জোগান। তাই বাড়ছে দড়ি কারিগর নারীর সংখ্যা। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলেও আশ্বাস দেন।

নারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভোলা সদরের চর সামাইয়া, চর ছিপলী, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া জয়নগর, বালিয়া, বাপ্তা, ইলিশা, রতনপুর, শিবপুর, রাজাপুর, তুলাতুলিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার নারী দড়ি তৈরির কাজ করেন। দড়ি তৈরির জন্য হোগলা পাতা সংগ্রহ করেন পুরুষরা। সেই হোগলা পাতা রোদে শুকিয়ে চিকন করে চিঁড়ে হাতে পাকিয়ে সুতলি তৈরি করেন। সেই সুতলি দিয়ে বানাচ্ছেন দড়ি। নারীদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও দড়ি তৈরির কাজ করেন।

ভোলা সদরের চর সামাইয়া ইউনিয়নের চর ছিপলী গ্রামের তাসনুর বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালক। অভাব দূর করার জন্য তিনি প্রায় ২০ বছর আগে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও সংসারের খরচ জোগান। দড়ি তৈরির টাকা দিয়ে তিনি নতুন ঘরও বানিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়ের। এক ছেলেকে পড়াশোনা করেন বরিশালে।

একই গ্রামের ইয়ানুর বেগম জানান, প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে আঘাত পান। এরপর অনেক দিন ঘরে বসে ছিলেন। স্বামীর আয় না থাকায় অনেক কষ্ট হতো সেই সময়। পরে তাদের গ্রামের জাকির হোসেন তাকে দড়ি তৈরি করতে উৎসাহ দেন। এই কাজ শেখার পর তাদের সংসারে কোনো অভাব নেই। রত্না আক্তার, আতিকা বেগমসহ একাধিক নারী জানান, প্রতি ১ হাজার হাত দড়ি পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৬০ টাকায়। এতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। সংসারের কাজের ফাঁকে একজন নারী প্রতি মাসে দড়ি তৈরি করে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করেন।

নবম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা ও মিম জানান, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তারা গ্রামের নারীদের সঙ্গে দড়ি তৈরি করেন। তা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে তাদের পড়াশোনা ও হাতখরচ জোগান। এমনকি প্রতি মাসে কিছু টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন। বিবি মরিয়ম ও জান্নাত বেগম জানান, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি এসে দেখেন নারীরা হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে আয় করছেন। তা দেখে তিনি এখন দড়ি তৈরি করছেন। নিজেদের খরচের জন্য স্বামীর কাছে আর টাকা চাইতে হচ্ছে না।

পাইকারি ক্রেতা মো. জাফর ও জামাল হোসেন জানান, নারীদের কাছ থেকে দড়ি কিনে তারা ভোলা সদরের খেয়াঘাট এলাকার বিডি ক্রিয়েশন নামে একটি পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। ঢাকায় এই দড়ি দিয়ে সোফা, শো-পিস, চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে। এরপর তারা ৭৪টি দেশে রফতানি করে। ভোলায় এসব আসবাবপত্র তৈরি করতে পারলে গ্রামের নারী ও তারা লাভবান হতেন।

ভোলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো. আরিফ হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, দড়ি শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের আরো দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। ভোলার নারীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন। তারা নারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

একই সঙ্গে আড়ৎদাররা দড়ি দিয়ে ভোলায় আসবাবপত্র তৈরি জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App