×

সারাদেশ

নয়ন ও মিন্নির বিয়ের প্রমাণ দিলেন কাজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০১:২৭ পিএম

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আরো ৩ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য দেন মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) আনিচুর রহমান এবং অপর ২ সাক্ষী কামাল হোসেন ও মিনারা বেগম। এদের মধ্যে আনিচুর রহমান মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আদালতে। সাক্ষ্য দেয়ার সময় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচিত এ মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৮ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে।

আদালতে আনিচুর রহমান বলেন, আমি বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি)। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শাওন ও মুন্না আমার কাছে এসে বলে, আমাদের বন্ধু নয়ন একটি মেয়েকে ভালোবাসে। তাদের বিয়ে পড়াতে হবে। ওদের বিয়ের বয়স হয়েছে। এরপর ১৫ অক্টোবর শাওন, মুন্নাসহ ৪/৫ জন ছেলে এসে আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। ওখানে নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগমসহ ১৪/১৫ জন ছিল। আমি নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ে পড়াতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয়েছি। মিন্নির পরিবার বিয়েতে রাজি আছে কিনা জানতে চাইলে মিন্নি বলেন, তারা রাজি আছে। এ সময় উপস্থিত একজন ফোনে মিন্নির মায়ের সঙ্গে আমাকে কথা বলিয়ে দেন। মিন্নির মা আমাকে বিয়ে পড়াতে বলেন। আমি নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ে পড়াই। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৪৫/২০১৮। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ টাকা। বিয়েতে কাবিননামায় মিন্নির পক্ষে সাক্ষ্য ছিল জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মুন্না। নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষ্য ছিল রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি ও রাজু।

বিয়ে পড়ানোর পর আলাপচারিতায় জানতে পারি মিন্নির আপন চাচা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু সালেহ। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। নয়ন বন্ডের বাসা থেকে বের হয়ে সালেহ কাউন্সিলরকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। কিছুক্ষণ পর মিন্নির বাবা কিশোর আমাকে ফোন করে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। বেশ কিছুদিন পর আমি জানতে পারি, মিন্নি আবার রিফাত শরীফের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।

এরপর একদিন মিন্নির বাবা কিশোর আমাকে ফোন করে বলেন, আনিচ আমার মেয়ে মিন্নি ও নয়ন আগামীকাল তোমার কাছে যাবে। তাদের মধ্যে কমিটমেন্ট হয়েছে, তুমি তাদের তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। পরের দিন মিন্নি ও নয়ন বন্ড আমার কাছে আসেনি। মিন্নির বাবা পরের দিন আবার আমাকে ফোন করে বলেন, ওরা কালকে যেতে পারেনি। আজকে যাবে, তুমি তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। কিন্তু মিন্নি ও নয়ন বন্ড আমার কাছে আসেনি। রিফাত শরীফ খুন হবার পরে মিন্নির চাচা সালেহ আমাকে ফোন দিয়ে নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য সাংবাদিকদের দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু সাংবাদিকরা ও প্রশাসনের লোকজন আমার অফিসে গেলে আমি ভয়ে তাদের কাছে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কাবিননামার তথ্য দেই।

আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে আনিচুর রহমান আরো বলেন, একজন মুসলমান মেয়ের একসঙ্গে ২ জন স্বামী থাকতে পারে না। এরপর তিনি আদালতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কাবিননামা দাখিল করেন। অপর সাক্ষী কামাল আদালতে বলেন, আমার বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। ৪ হাজার টাকা বেতনে বরগুনা ক্যালিক্স একাডেমিতে দারোয়ানের চাকরি করি। ঘটনার দিন সকাল অনুমান সোয়া ১০টার সময় কয়েকটি ছেলে একটি ছেলেকে কলেজ গেট হতে টেনে আমাদের স্কুলের সামনে এনে কোপায়। অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলেটি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি রিকশায় উঠে যায়। পরে জানতে পারি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজি রিফাত শরীফকে কুপিয়েছে।

আর মিনারা বেগম বলেন, আমার ছেলে হেলাল সিকদার রিফাত শরীফের বন্ধু। তার কাছে এবং ভিডিও দেখে জানতে পারি ঘটনার দিন ২৬ জুন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজিসহ অনেক ছেলেরা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সাক্ষ্য প্রদান শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী কমল কান্তি দাস ও মাহবুবুল বারী আসলাম তাদের জেরা করেন। এদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় শিশু আদালতে গতকাল ২ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এ দিন সাক্ষ্য দিয়েছেন আবদুল হাই আল হাদি ও সজল। শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। এরপর ওই ২ জনকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে বরগুনা কারাগারে থাকা ৯ শিশু আসামি এবং জামিনে থাকা ৫ শিশু আসামি আদালতে উপস্থিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App