×

মুক্তচিন্তা

কিশোর অপরাধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৩১ পিএম

সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে উঠতি বয়সের কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। কখনো ওরা সংঘবদ্ধ হয়ে চালাচ্ছে ধর্ষণ। এমনকি চুরি, ছিনতাই থেকে শুরু করে ডাকাতি, মাদক পাচারের মতো মারাত্মক অপরাধের কাজে উঠতি বয়সের কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার খবর শোনা যাচ্ছে। এসব কিশোর শ্রেণি কখনো ঘটাচ্ছে মারামারি, খুনাখুনির মতো ঘটনা। অস্ত্র বহনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের পরিবার বিচ্ছিন্ন কিশোরদের লিপ্ত থাকার রয়েছে উদ্বেগজনক ঘটনা। এর পেছনে কাজ করে এক শ্রেণির শক্তিশালী সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্র। সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল পরিবারের কিশোরদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টানছে। সাহসী ও বুদ্ধিমান কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো মারাত্মক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

নিম্নবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের কিশোররাও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। অর্থাভাব যেমন একটি কিশোরকে অপরাধ জগতে ঠেলে দিচ্ছে তেমনি অর্থের প্রাচুর্যও কখনো অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাবা-মায়ের অসতর্কতার কারণে এসব কিশোররা অসৎ সঙ্গে মেশার সুযোগ করে নিচ্ছে। কখনো হয়ে পড়ছে নেশাগ্রস্ত। ডাণ্ডির বদলে সেবন করছে দামি সিগারেট, গাঁজা এমনকি ইয়াবা। তখনো প্যাথেড্রিন জাতীয় ইনজেকশন পুশ করছে দেহে। নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার নামে তারা নানা ধরনের অসামাজিক কাজে জড়িয়ে রয়েছে। ঢাকা শহরের নাইট ক্লাবের নামের এক ধরনের আখড়ায় সিসা নামক মাদকে ধূম্র সৃষ্টি করে নেশায় বুঁদ হয়ে নানা ধরনের বেলেল্লাপনায় লিপ্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উচ্চবিত্তের কিশোরীরাও। নেশার ঘোরে ঘটিয়ে চলছে নানা অপরাধ, সমাজবিরোধী কার্যকলাপ। তাদের দ্বারাও ধর্ষণ, হত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মা-বাবা, নিকটাত্মীয়কে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।

আজকের কিশোর দিনে দিনে বেড়ে ওঠে। কিশোর পরিণত বয়স্ক হয়। অনুক‚ল পরিবেশ পেলে ধীরে ধীরে তাদের মনে চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। বিদ্যা-বুদ্ধি-মননে, প্রগতিশীলতায় সমৃদ্ধি লাভ করে। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জনেও সক্ষম হয়। সমাজ গঠনে রাখতে পারে সক্রিয় ভ‚মিকা। তাই দেহমনের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রতিটি শিশুর জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা, অফুরন্ত আলোকময় পরিবেশ। দেশের অধিকার বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, বস্ত্র এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ওদের সামাজিক নিরাপত্তা ও বাঁচার ন্যূনতম অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে যোগ্যতা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পেলে কখনই ওরা অপরাধে জড়াবে না। বোঝা হবে না সমাজের। বরং দেশ ও জাতি গঠন বাংলাদেশের সব স্তরের কিশোর রাখতে সক্ষম হবে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা। এজন্য সর্বস্তরের শিশুর জন্য সুশিক্ষাদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিম্নবিত্তের শিশুদের জন্য স্বল্পমেয়াদি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রাম-গ্রামান্তরে প্রতিটি নিম্নবিত্তের শিশু-কিশোরের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টিদান নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App