×

মুক্তচিন্তা

এনটিআরসিএর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কিছু প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৫৪ পিএম

এনটিআরসিএর নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কিছু প্রশ্ন

আমি এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) একজন শিক্ষক নিবন্ধনধারী এবং চাকরিপ্রত্যাশী। এনটিআরসিএর ‘পকেট কাটা’ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গত প্রায় দুই-তিন বছর ধরে বেকার চাকরিপ্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণের মধ্যে অসহায়ত্ব কাজ করছে। বেকারদের জিম্মি করে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই ব্যবসায়িক মনোভাব বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা সন্দেহ! নিবন্ধনধারী তরুণদের কত-শত প্রতিবাদ, আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও ‘এনটিআরসিএ’ এ ব্যাপারে নির্বিকার!

এছাড়া এনটিআরসিএর আরো কিছু পরিকল্পনাহীন পদক্ষেপের ফলে নিবন্ধনধারীদের মনে ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়েছে। নিম্ন এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো : দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল, স্কুল-২, কলেজ পর্যায়) শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘এনটিআরসিএ’ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) খুব শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি (১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদেরসহ) জারি করতে যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, গণবিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। যার অর্থ হলো, আবার যত খুশি তত আবেদন! কেননা গতবারের অর্থাৎ ২০১৮ সালের নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের (১-১৪তম নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের জন্য) উদ্দেশ্যে যে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল সেখানে যত খুশি তত আবেদনের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৬ সালের গণবিজ্ঞপ্তিতেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। সহজ করে বললে, এর মাধ্যমে বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের ‘পকেট কাটা’ হয়েছিল! বলা হয়েছিল, সব নিবন্ধনধারী পদের ধরন ঠিক রেখে শূন্য পদ সাপেক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। যার ফলে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও আবেদন প্রক্রিয়ার মারপ্যাঁচে অনেক মেধাবী নিবন্ধনধারীরও চাকরি হয়নি। যাদের মেধাতালিকা একটু পেছনের দিকে ছিল চাকরির আশায় তাদের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য আরো বেশি অর্থ (লাখ টাকারও বেশি!) খরচ করতে হয়েছে। একজন পরীক্ষার্থীকে শুরুতে টাকা দিয়ে আবেদন করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগের সময় চাকরি পেতে আবার কেন হাজার হাজার টাকা খরচ করে আবেদন করতে হবে? তাও আবার একটি আবেদন না, যত খুশি তত আবেদন।

এমন ভাগ্য যাচাইয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ম্যারপ্যাঁচে মেধাতালিকার অনেকে নিচে অবস্থান করে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, আবার মেধাতালিকার উপরের দিকে অবস্থান করেও অনেকের চাকরি হচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, তাহলে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে নাকি টাকারও মূল্যায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য চাকরিতে একটি আবেদনের মাধ্যমে চাকরি হলে শিক্ষক নিবন্ধনে হবে না কেন? নাকি বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিতেই হবে! আরো সহজে ব্যাখ্যা করে যদি বলি, একটি প্রতিষ্ঠানে একটি পদে ২৫ জন চাকরি প্রত্যাশী নির্দিষ্ট অর্থ খরচ করে আবেদন করলেও (কেননা কেউ জানে না কে কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবে অথবা কার চাকরি হবে!) চাকরি হবে একজনের, বাকি ২৪ জনের আবেদনের কষ্টের টাকা (প্রতিটি আবেদন ১৮০+ টাকা করে) নষ্ট হবে! পরিশেষে একটি প্রতিষ্ঠানে তো নিয়োগ হবে তাহলে কেন একটি আবেদনের টাকা রাখা হবে না? আর এভাবে যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া (একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন অর্থ হলো যত খুশি তত আবেদন) রাখতেই হয় তাহলে আবেদন যতই হোক না কেন একটি আবেদনের টাকা রাখলেই তো হয়। এনটিআরসিএর কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনে এভাবে অসহায় বেকারদের পকেট কাটবেন না, মেধাবী নিবন্ধিতদের লটারির মতো করে ভাগ্য নির্ধারণ করবেন না! বিষয়ভিত্তিক একটি আবেদনের ভিত্তিতে মেধাতালিকা অনুসারে নিবন্ধনধারীদের অতি দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।

এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ নিজের বেলায় নিয়ম-কানুনের কথা বলে, কিন্তু নিবন্ধনধারীদের যৌক্তিক দাবি ও বিভিন্ন সমস্যার কথা বিভিন্ন সময় বিবেচনায় নেয়া হয় না। যাহোক, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ নিবন্ধন সনদধারীর মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। আবার বিভিন্ন সময় ‘এনটিআরসিএ’ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিবেচনাহীন সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষক নিবন্ধনধারীর কপাল পুড়েছে! আশাকরি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ নিজের স্বার্থ নয়, বেকার চাকরি প্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App