×

মুক্তচিন্তা

মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১০:২৬ পিএম

আমাদের প্রিয় পৃথিবীর বড় দুর্দিন আজ। মানুষরূপী কিছু দৈত্যের হিংস্র থাবায় ক্ষত-বিক্ষত। কিছু লোভী শেয়াল আর শকুনের আনাগোনা এখানে আজ; তারা গিলে খাচ্ছে, ছিলে খাচ্ছে ইচ্ছেমতো পৃথিবীর দেহ। খাচ্ছে প্রমত্তা নদীর বৃক্ষ, শ্যামল বনানীর রূপ, এমনকি বহুদূর পাড়ি দেয়া পরিযায়ী পাখি। মাটি খাচ্ছে, বালি খাচ্ছে এমনকি শহরের সামান্য গলি, ফুটপাত, পার্ক। খাচ্ছে মানুষের মৌলিক দাবি কোনো মতে বেঁচে থাকার ছোট্ট স্বপ্নটুকুন। এই অসুস্থ পৃথিবীর চিকিৎসা প্রয়োজন। এই জটিল ‘অপারেশনের’ জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ, দক্ষ চিকিৎসক একদল হৃদয়বান বুদ্ধিজীবী। যাদের আছে বিশ্বাস, বুদ্ধি আর হৃদয়ানুভূতি; আছে বিদ্যমান ভোগবাদী বিশ^ব্যবস্থাকে ‘না’ বলার সাহস। আছে মানবিক পৃথিবীর গড়ার প্রত্যয় আর মরমী হৃদয়। বিদ্যা আসে বই থেকে, প্রকৃতি-পাঠ থেকে, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত আর অভিজ্ঞতা থেকে। এই ‘বিদ্যার’ অপর নাম জ্ঞান। কিন্তু কেবল বিদ্যা দ্বারা বুদ্ধিজীবী হওয়া যায় না। বিদ্বানরা পণ্ডিত হতে পারেন, বিশেষজ্ঞ হতে পারেন; কিন্তু বুদ্ধিজীবী হতে হলে বিদ্যার সঙ্গে বুদ্ধির সৎ প্রয়োগ থাকা চাই। বুদ্ধিজীবী বুদ্ধির সাহায্যে বিদ্যমান সমস্যার সঠিক ব্যাখ্যা করবেন, সমাধানের পথ খুঁজে মানুষকে সেদিকে আহ্বান করবেন। তবে তাকে অবশ্যই হৃদয়বান হতে হবে। হৃদয়বান না হলে, তিনি বুদ্ধি থাকলেও বুদ্ধিজীবী হবেন না; হবেন বুদ্ধি-ব্যবসায়ী। দুঃখের বিষয়, এই বুদ্ধি-ব্যবসায়ীদের খপ্পরে আজ আমাদের প্রিয় পৃথিবী। সর্বত্রই আজ তাদের জয়জয়কার। সভা-সেমিনার, প্রচার মাধ্যম, পুরস্কার, উন্নতি-পদোন্নতি সব তাদের দখলে। কবি জীবনানন্দ দাশ এই আক্ষেপ থেকেই লিখেছেন ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’ আজ বিশ্বের দিকে তাকালে মনে হয় বিশ্ব একটি মানবিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রত্যাশা করছে। পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই মানুষকে মানবিক হতে হবে। মানুষ যদি মানবিক না হয়, তাহলে মানুষের পৃথিবী কখনো সুন্দর শান্তিময় হবে না। এই পৃথিবী আমাদের, আমাদের পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ সব উগ্রপন্থিদের নিশ্চিহ্ন করে পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখতে হবে। মানুষ তার স্বভ‚মি থেকে হচ্ছে বাস্তুচ্যুত। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দেশে আগুন জ্বলে উঠছে। শান্তির পরিবর্তে মানুষ ভোগ করছে মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক শাস্তি। আমরা কি পারি না সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দর দিন আনতে? মানুষের প্রয়োজনেই মানুষকে সুন্দর ও শান্তির পথ বেছে নিতে হবে। কল্যাণের দায়িত্ব নিতে হবে মানুষকেই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষের পাশাপাশি মানবিক বোধ জাগ্রত করতে মানুষকে আরো সচেষ্ট হতে হবে। বুদ্ধি মহান স্রষ্টার দেয়া এক বড় উপহার। স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস এবং ঐশীজ্ঞান বুদ্ধিকে সঠিক নির্দেশনা দেয়। বিশ্বাস আর ঐশীজ্ঞান ছাড়া শুধু বুদ্ধি দিয়ে মানব সভ্যতাকে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ^ব্যবস্থাই তার প্রমাণ। তবে যুক্তি ও বুদ্ধির প্রয়োগ অবশ্যই লাগবে। কেবল বিশ্বাস, জ্ঞান, বুদ্ধি আর হৃদয়ানুভ‚তির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষের সার্বিক কল্যাণ হতে পারে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। কলাম লেখক, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App