নারী ও শিশু পাচার রোধে আমাদের করণীয়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:২৩ পিএম
নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে এক ধরনের সহিংসতা, যা মানব সভ্যতার প্রতি উপহাস। আমাদের দেশের দরিদ্র নারী ও শিশুরা পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে যায় সামান্য প্রলোভনে। মূলত অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যের জন্যই ঘটছে এই পাচারের ঘটনা। সরকারি-বেসরকারি কার্যক্রম জোরদার করা হলেই দেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের মতো জঘন্য অপকর্ম কমে আসবে। পাশাপাশি জনসচেতনাও বাড়াতে হবে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলছে, প্রতি বছর অনন্ত ১৫ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে দেশের কয়েকটি চক্র জড়িত। এমন একটি পাচার চক্রের ৮ সদস্যকে র্যাব-১১ গত রবিবার গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে একজন নারী।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও মুগদা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কবল থেকে পাচারের জন্য আনা ২ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, চক্রটির সঙ্গে এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি ও অসাধু ব্যক্তিরা যুক্ত। চক্রের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবার, পোশাকশিল্প এবং ডিভোর্সি সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করে থাকে। গত এক দশকে পাঁচ লাখ নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয়েছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ৩০। পাচারকারীরা বিভিন্ন পথে নারী ও শিশু পাচার করে থাকে, যথা- স্থলপথ, জলপথ অথবা বিমান পথ। বাংলাদেশ থেকে পাচারের যে উদাহরণগুলো পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় বিমান ও স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রমের মাধ্যমেই বেশিসংখ্যক নারী ও শিশু পাচার হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-বঙ্গ সীমানা দিয়েই পাচার হয় বেশি।
বাংলাদেশের পাচারকারীরা ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত ব্যবহার করে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করে। দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে পণ্যসামগ্রী পাচারের পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে। সরকার নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করাসহ পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। স্থল ও বিমানবন্দরগুলোতে নেয়া হয়েছে বিশেষ তল্লাশির ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটিও কাজ করছে। আবার উদ্ধারকৃত নারী ও শিশু পুনর্বাসনের জন্যও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা ও কর্মসূচি। নারী ও শিশু পাচার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম নিতে পারে বড় ধরনের ভ‚মিকা। সুসংঘবদ্ধ পাচারকারীরা বছরের পর বছর এ অপরাধ সংঘটিত করে চললেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় মনোভাবের কারণে। নারী-শিশু পাচার বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারের দায়বদ্ধ ভ‚মিকা দেখতে চাই।