×

জাতীয়

করোনার ঝুঁকি বাংলাদেশেও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৫ এএম

করোনার ঝুঁকি বাংলাদেশেও
সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
ভৌগোলিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে যে কোনো সময় বাংলাদেশেও ঢুকে যেতে পারে নভেল করোনা ভাইরাস। কেননা, চীনের পর ভারত ও নেপালে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই বিমানবন্দরসহ দেশের সব স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং (রোগ শনাক্ত পরীক্ষা) ব্যবস্থা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা ভাইরাসের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ, মনিটরিং ও বিশ্লেষণের জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় গাইডলাইন তৈরি করেছে সরকার। এ ছাড়া নেয়া হয়েছে আরো বেশ কিছু উদ্যোগও। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। হেলথ কার্ডের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তথ্য-উপাত্ত রাখা হচ্ছে। ১৪ দিন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এদিকে গতকাল চীনে থাকা বাংলাদেশি যারা দেশে ফিরতে আগ্রহী তাদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চীন সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। আর করোনা ভাইরাসবাহী সন্দেহে শওকত আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি যাত্রীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় আগরতলা ইমিগ্রেশন ফেরত পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি চিকিৎসকদের নতুন এ রোগটির বিষয়ে স্বল্প প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশেষ করে রেসপিরেটরি (শ্বাস-প্রশ্বাস) চিকিৎসকদের এই প্রশিক্ষণ দরকার। শ্বাস কষ্ট নিয়ে যেসব রোগী আসবে তাদের প্রশ্ন করতে হবে তিনি চীন থেকে এসেছেন কিনা, তার পরিবারের কেউ বা চীন থেকে আসা কারো সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন কিনা। চীনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা উচিত কিনা এই প্রসঙ্গে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এই অবস্থাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। তাই এখনই এই উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন নেই। যদি তা করা হয় তবে যাত্রীরা চীন থেকে সরাসরি না এসে অন্য পথে দেশে ঢুকবে। ফলে স্ক্রিনিং করা মুশকিল হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী ভোরের কাগজকে বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তাতে এই ভাইরাস সংক্রমণের একটি রাস্তা তৈরি করেই রেখেছে। এ ছাড়া কলকাতাতেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, এই ভাইরাস জ্যামিতিক হারে দ্রুত ছড়ায়। বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রী যাতায়াত করে সেক্ষেত্রে ঝুঁকিটা একটু বেশি। বিমানবন্দরগুলোতে চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং আরো জোরদার করা উচিত। ইতোমধ্যেই চীনের হুয়ান প্রদেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাণিজ্যের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে আমাদেরও ওই প্রদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই কীটতত্ত্ববিদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতিই নেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম চলছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি হয়েছে। আপাতত দেশের ৮টি বিভাগের সব জেলাসদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App