করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১২ পিএম
দ্রুত রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা এবং এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে পারলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে করোনা ভাইরাস।কয়েকদিন ধরে নতুন এক ভাইরাস সারাবিশ্বে মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বলা হচ্ছে, এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের শরীরে ছড়ায়নি। করোনা ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যে ‘মিউটেট করছে’, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে; পুরো বিশ্বেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রথমে চীনের হুবেই প্রদেশে উহান শহরে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর তা এখন পর্যন্ত জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানে ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন এই সংস্করণ শুরু হচ্ছে জ্বর দিয়ে। তারপর কাশি থেকে গলাব্যথা। এমনকি কারো কারো তীব্র শ্বাসকষ্টের পর নিউমোনিয়ার পরিণত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসকে দুই বছর আগের সার্স ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে বলে জানান। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি চীনে এই ভাইরাসে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যদিও দেশটির সরকারের দাবি শ’দুয়েক মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা এই সংখ্যা কয়েক হাজার। এরই মধ্যে আক্রান্তদের চারজন মারাও গেছেন। সংখ্যা নিয়ে চীনের ভিন্ন অবস্থান হলেও তারা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে, মানুষ থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চায়না ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ভাইরাস দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে আশার কথা ভাইরাসটি প্রতিরোধযোগ্য। দ্রুত রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা এবং এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে পারলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে করোনা ভাইরাস। আমরা লক্ষ করেছি, বাংলাদেশে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে খুব দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে রোগ ছড়ানোর অন্যতম উৎস দেশগুলো থেকে আসা মানুষকে বিমানবন্দরেই থার্মাল স্ক্যানিং শুরু করেছে। বিমানকর্মীদের পাশাপাশি কাজ করছে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তারা কোনো কোনো ব্যক্তিকে কুর্মিটোলা জেনোরেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি। কেননা এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ আন্তঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাদের শান্ত রেখে সঠিক পদক্ষেপেই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এ ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ সচেতন হলে শুধু করোনা ভাইরাস কেন, যে কোনো বড় সমস্যারও সমাধান দ্রুত সম্ভব মনে করি। উত্তরা, ঢাকা। [email protected]