×

সারাদেশ

পানি পান করায় শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে দিল সহপাঠী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:৩৪ পিএম

পানি পান করায় শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে দিল সহপাঠী

আহত ছাত্র অনির্বান সেন গুপ্ত পরশ

পানি পান করার অপরাধে সপ্তম শ্রেণির স্কুল ছাত্রকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে তারই সহপাঠী। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর বেলা রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত পি এন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার ইঙ্গিত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবক।

আহত ছাত্রের নাম অনির্বান সেন গুপ্ত পরশ (১২)। তাকে মেরে হাত ভেঙে দেয়া ছাত্রের নাম মোজাহিদ (১২)। দুজনেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আহত পরশ রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে বিশ্রামে আছে। প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার কারণে সে স্বাভাবিক হতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর নিতে যাননি ওই শিক্ষার্থীর। তবে মারধরকারী শিক্ষার্থীর বাবা তাকে দেখে সান্তনা জানিয়ে এসেছেন।

আহত অনির্বান সেনগুপ্ত পরশ জানায়,এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে স্কুলে খাবার খাওয়ার সময়ে তার বোতলের পানি ফুরিয়ে গেছে। এ সময় পাশে থাকা মুজাহিদের বোতলের পানি পান করে। অনুমতি না নিয়ে মুজাহিদের পানি পান করায় সে তার ডান হাতে কি যেন দিয়ে আচমকা আঘাত করে। এরপর সে আহত হয়।

ব্যথা পেয়ে খাবারের প্যাকেট ফেলে দিয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে স্কুলের বাইরে চলে যাই। পরে কয়েকজন বন্ধু আমাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের পিয়ন যগা দার কাছে নিয়ে যায়। তিনি স্কুলের কেরানি স্যারের কাছে গিয়ে হাতে বরফ দেয়ার পরামর্শ দেন।কেরানির কাছে গেলে তিনি বিউটি ম্যাডামের কাছে যেতে বলেন। বিউটি ম্যাডাম একটু অপেক্ষা করতে বলে চলে যায়। আর খোঁজ নেয়নি।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর হাতের ব্যথা বাড়তে থাকলে সে স্কুলটির সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমানের কাছে যায়। তিনি তার এ অবস্থা দেখে "হাত ভাঙেনি" বলে মন্তব্য করে বলেন, তুমি বাড়িতে চলে যাও। বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এবং ভাঙা হাত বুকের ওপর ধরে আমি একা একা বাড়িতে চলে আসি।

পরশের বাবা পল্লব কুমার সেনগুপ্ত জানান, আমি আমার কর্মস্থল থেকে দ্রুত বাড়িতে গিয়ে দেখি ছেলের এ অবস্থা। পরে তাকে পুঠিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান পরশের ডান হাতের কবজির হাড় ভেঙে গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমিও একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি। এখানে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে সুচিকিৎসা দিয়ে তার অভিভাবককে ফোন করে জানিয়ে দেই। তারা আমার ছেলে হাসপাতালে না নিতে পারলেও আমাকে ফোন করেও তো জানাতে পারতো। তিনি শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বলেন, স্কুলটিতে শিক্ষক কর্মচারী মিলে প্রায় ২৫-৩০ জন দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কি একজনও দায়িত্ববান ছিলো না? এর পর কোন নিরাপত্তায় আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা করতে পাঠাবো?

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। যেখানে শিক্ষকদের এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণকারী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইমদাদুল হক দুলাল লিখেন, সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার নেই, ছেলেটা তাড়াতাড়ি সুস্থ হোক এই কামনা রইল।

এ ব্যপারে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে বলেন, মিটিং এ আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App