অপরাধী মিয়ানমার এবং অতঃপর
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৫৫ পিএম
রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার বিপদ থেকে সুরক্ষার দাবিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হওয়া গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ নিপীড়ন ও বঞ্চনার অবসানের পথে একটি ছোট পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা জানি, এই আদেশ একদিনে রোহিঙ্গাদের জীবন বদলে দেবে না। তবে এটি একটি প্রক্রিয়ার সূচনা, যার মাধ্যমে আমরা আশা করি, একদিন তারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যেতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে মিয়ানমার মানবাধিকার ও মানবতার মৌলিক দায়িত্ব পালনের দায় এড়াতে পারে না। তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরার ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিতে দেশটির যে দায়িত্ব রয়েছে রাখাইনে উপযুক্ত ও সহায়ক পরিবেশ তৈরির, সেদিকে নজর দেয়ার জন্য তিনি মিয়ানমারের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টসের কমিশনার রিড ব্রডির মন্তব্য। তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত হওয়া, খুন ও ধর্ষণের শিকার লাখো রোহিঙ্গার জন্য আজকের দিনটি স্বীকৃতির দিন। বিশ্বে আইনের শাসন ও মানবতার মর্যাদা রক্ষায় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। জানালেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত সহিংসতা ও বৈষম্যের নীতিতে গণহত্যার উদ্দেশ্য থেকে থাকতে পারে। আদালত সেই বিবেচনা থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং বলছেন, এগুলো মেনে চলা মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক।
মিয়ানমার দাবি করেছিল, দেশটির সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত কার্যক্রম গণহত্যা সনদের আওতায় গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে গণ্য করা যায় না মিয়ানমারের এমন দাবির বিষয়ে আদালত বলেছেন, গণহত্যা ঘটেছে কি ঘটেনি, তা এই পর্যায়ে বিচার্য নয় এবং গাম্বিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী কিছু কিছু কার্যক্রম সনদের শর্তগুলো পূরণ করে। গণহত্যা সনদের আওতায় রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা, তার প্রয়োগ ও প্রতিপালন বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রশ্নে এসব কারণ আপাতদৃশ্যে বিচার্য বলে আদালত মতপ্রকাশ করেন এরপর আদালত গাম্বিয়া মামলাটি করতে পারে না বলে মিয়ানমারের দাবির বিষয়টিতে তার পর্যবেক্ষণ দেন। মিয়ানমার বলেছিল, ২০১৭ সালের কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে অনানুপাতিক হারে শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং বেসামরিক নাগরিক ও আরসা যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করেনি, এমনটা বলা যাবে না। আদালত জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে বলে যে উপসংহার টানা হয়েছে, তা উল্লেখ করেন। এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের আলোকে গাম্বিয়া যেসব পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করেছিল, সেগুলোর প্রথম তিনটি রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আদালত অভিমত দেন। আদেশের পর তিনি এটিকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ নিপীড়ন ও বঞ্চনার অবসানের পথে একটি ছোট পদক্ষেপ অভিহিত করে বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
কলাম লেখক
[email protected]